সাইফুল ইসলাম, পলাশ প্রতিনিধি: নরসিংদীর পলাশে নামে বেনামে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০ টি বেকারি। এদের মধ্যে অধিকাংশ বেকারির বিরুদ্ধে নীতিমালা না মেনে অস্বাস্থ্যকর,নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরির হচ্ছে। ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেকারি মালিকরা অবাধে এ ব্যবসা করছে। মান নিয়ন্ত্রণহীন ও নোংরা পরিবেশে উৎপাদিত বেকারির খাদ্য খেয়ে জনস্বাস্থ্যে হুমকির মুখে পড়ছে। অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন করে পাড়া, মহল্লা, বিভিন্ন বাজারের চায়ের দোকানে,স্কুলের সামনে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বেকারি খাদ্য পণ্য। অনেক জায়গায় মেয়াউর্ত্তীণ পচা ও বাসী খাদ্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ফলে বেকারির খাদ্য খেয়ে বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিশেষ করে কোমলমতি শিশুরা পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্য নীতিমালা অনুযায়ী বিএসটিআই ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন নিয়ে বেকারি চালু করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানছেন না কেউ। এছাড়া প্যাকেটের গায়ে বাধ্যতামূলক পণ্যের উপাদান, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে পণ্য উৎপাদনের কথা থাকলেও কোনো মালিকই এসবের তোয়াক্কা করছেন না। বিএসটিআই এর দ্বারস্থ না হওয়ায় এসব বেকারির উৎপন্ন খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই।
সরেজমিনে উপজেলার চরসিন্দুর বাজার,বালিয়া বাজার,ঘোড়াশাল বাজার,পলাশ বাজারসহ উপজেলার সবকটি বাজারে অবস্থিত বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, কারখানায় বিএসটিআই এর কোন অনুমোদন নেই। টেকনিশিয়ান না থাকায় নিজেদের কলাকৌশলে আটা, ময়দা, চিনি, ডালডা, সোডা, রং ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হচ্ছে। খাদ্যের গুণগতমান নষ্ট করে স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে অদক্ষ কারিগর দ্বারা ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে এসব বেকারির খাদ্য সামগ্রী। দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশ পাশে। কেক, পাউরুটি, বিস্কুট,চানাচুর, টোস্টসহ নানা রকমের খাবার ট্রে গুলোতে যখন সাজিয়ে রাখা হয় তখন দেখা গেছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। আবার কিছু খাবারের উপর জেঁকে বসছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করার কড়াইগুলো অপরিস্কার ও নোংরা। শ্রমিকরা খালি গায়ে ও হাতে এসব পণ্যের কাচামাল বানাচ্ছে এবং খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। সেই সাথে খালি গায়ে থাকার ফলে শ্রমিকদের শরীরের ঘাম এসে পড়ছে আটার উপর। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছাড়াই বাহারি রকমের আকর্ষণীয় মোড়কে বাজার জাতের জন্য প্যাকেট করা হচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে বছরের পর বছর অনুমোদনহীন কারখানা চালানোর পরেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এ দিগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরন দিয়ে তৈরি করা এসব খাবার খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। পেটব্যাথা, শরীর দূর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব ভেজাল খাদ্য উৎপাদন বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপড়া বাড়ানোসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে মোঠফোনে জানতে চাই, উপজেলার স্যানেটারি ইন্সপেষ্টর মাহমুদা খানন আমার সংবাদকে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বেকারি মালিকদের একাধিকবার বলা হয়েছে বিএসটি আই এর অনুমোদন নিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে খাদ্য দ্রব্য প্রস্তত করতে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান বলার পর ও নিয়ম নীতি না মেনে খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন করছে অতি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।