অনলাইন ডেস্কঃ
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, বিচারকরা সঠিক বিচারটি করতে সক্ষম হয়েছেন। আজ বুধবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে যে এ দেশে বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচার হয় এবং যাঁরাই নাকি এ ধরনের কর্ম করবে, তাঁদের বিচার অবশ্যই হবে। এটাই হলো আমার প্রতিক্রিয়া। আমি মনে করি, বিচারের রায় যথাযথভাবেই বিজ্ঞ বিচারকরা, বিজ্ঞ আইনজীবীরা তুলে ধরেছিলেন এবং বিচারকরা সঠিক বিচারটি করতে সক্ষম হয়েছেন।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমরা দেখেছি পুলিশের তখন (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত) যারা পুলিশের ডিউটিতে ছিল… সেই জায়গাটিতে… এবং যারা নাকি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরও এখানে আপনারা দেখেছেন… রায়ের মধ্যে তারাও আসছে। কারণ কেউই তাদের দায়িত্বে অবহেলা করতে পারবে না। আর এ ধরনের নৃশংসতার যাঁরা প্রোগ্রাম নিয়েছিলেন, যাঁরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, যাঁরা অর্থ জোগান করেছেন তাঁরাও… তাদেরও এখানে ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবনের দণ্ড হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা যথার্থই হয়েছে। এবং আমরা… যারা বিদেশে পালিয়ে আছে তাঁদেরও খুব শীঘ্রই ধরার আমরা ব্যবস্থা… ফিরিয়ে নিয়ে আসার আমরা ব্যবস্থা নেব… এবং বাকিজনদেরও… । এ রায় শীঘ্রই কার্যকরী হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
জাতি মনে করেছিল যে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হবে, এটা হয়নি। আপনি কি মনে করেন এটা যথার্থ হয়েছে? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন হাওয়া ভবনে এই মিটিংটা হয়েছে এটা সঠিক। আমাদের যাঁরা তদন্ত করেছেন, তাঁদের রিপোর্ট… এবং আমাদের আইনজীবীরা যথার্থভাবে তুলে ধরেছেন। বিচারক যে রায় দিয়েছেন, এখানে আমার বলার কিছু নেই, উনি যথার্থভাবেই বিবেচনা করে দিয়েছেন। আমরা, আমাদের রাষ্ট্রপক্ষ যদি মনে করেন, এই রায় যথার্থ হয়নি, এখানে আপিলেরও ব্যাপার আছে, সেখানে যেতে পারেন। আমি সেখানে কোনো মন্তব্য করছি না।’
‘আমি মন্তব্য করছি যে, আপনাদের মনে আছে, জজ মিয়া… এবং একজনকে দিয়ে একটা কমিশন তৈরি করেছিল। অনেক কিছু এইটাকে ঢেকে দেওয়ার জন্য, এটা আড়াল করার জন্য… এটাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা অনেক হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগের লোক নিয়ে… তাঁদের বাড়িঘর তছনছ করে… তাঁকে আসামি বানানোর প্রচেষ্টা হয়েছিল; এগুলো আপনারা সবই দেখেছেন। এটার কারণটা কী ছিল? যারা এই কর্মটা করেছিল, তারাই এই সমস্ত আড়াল করা যায় তার একটা ব্যবস্থা নিয়েছিল। আপনারা দেখেন, মামলাটি পর্যন্ত নেয় নাই। আমাদের তখনকার… আমাদের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল, আমাদের জলিল ভাই গিয়েছিলেন মামলা করতে, সাবের হোসেন সাহেব মামলা করতে গিয়েছিলেন, মামলা নেওয়া হয় নাই। ইভেন জাতীয় সংসদে আমাদের নেতারা যখন প্রটেস্ট করতে যাচ্ছিলেন, তখনও তাঁদেরকে… কণ্ঠ রোধ করে দেওয়া হয়েছিল, বলতে দেওয়া হয় নাই। এতেই প্রমাণ করে যে, এরা সবাই, এই যে যারা নাকি শাস্তির আওতায় আসছেন, সবাই তার সঙ্গে জড়িত ছিল।’ বলছিলেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের আজ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির আসামির মধ্যে আরো রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তখনকার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মাইন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মাইন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী প্রমুখ। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকসহ বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
আজ রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় দেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।