টি.আই সানি গাজীপুরঃ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ২টি গুচ্ছ গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই, একটি
২নং গাজীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত,আরেকটি শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা দিঘীরপাড়
অবস্থিত। দুইটি গুচ্ছ গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষের মাঝে প্রতিনিয়ত চলছে
বাঁচার লড়াই। এদের জীবনযাত্রা অতীব দারিদ্র সীমার নিচে। ভালো নেই কেউ। (১০
অক্টোবর) বুধবার ২নং গাজীপুর ইউনিয়নের শ্রী মঙ্গল পুকুর পাড় আদর্শ গুচ্ছ গ্রাম ও
শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা ওয়াদ্দা দিঘীরপাড় গুচ্ছ গ্রাম থেকে সরেজমিনে ঘুরে জানা
যায় এদের কষ্টের কথা।
২নং গাজীপুর ইউনিয়নের শ্রী মঙ্গল পুকুর পাড় বর্ণ মলিকা আদর্শ গুচ্ছ গ্রামে রয়েছে
৬০টি পরিবার, শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা ওয়াদ্দা দিঘীরপাড় গুচ্ছ গ্রামে রয়েছে ৬০ টি
পরিবার মোট দুইটি গুচ্ছ গ্রামে রয়েছে ১২০টি পরিবার। ১২০টি পরিবারে সদস্য
রয়েছে প্রায় ৫শতেরও উপরে। ৩০-৪০ বছর যাবত বসবাস করে যাচ্ছেন এরা। এদরে কোন
আলাদা জায়গা জমি নেই। সরকারী খাস জমিতে বসবাস করেন তারা। এদের খবর কেউ
রাখেনা।
গাজীপুর ইউনিয়নের শ্রী মঙ্গল পুকুর পাড় আদর্শ গুচ্ছ গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের
ছেলে আফাজ উদ্দিন (৭৫) জানান,৫০-৬০ বছর যাবত এইহানে থাহি,গুচ্ছ গ্রাম অইছে
অনেক পরে। আমরা অনেক কষ্ট কইরা চলি। আমাদের খোঁজ খবর কেউ রাহেনা। একই গুচ্ছ
গ্রামের সামিনা বেগম বলেন,আমার দুই জন মেয়ে সন্তান, ২০ বছর আগে আমার
স্বামী আহীর উদ্দীন দুইটা চোখ অন্ধ হয়ে রয়েছে। এই অন্ধ স্বামী নিয়া এহন সংসার
চালাইতে পারিনা কেউ খবরও লয়না।
জমিনা বেগম (৭০) বলেন আমার স্বামী ২৫বছর আগে মারা গেছে আমার তিন ছেলে
অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ইব্রহীম নামে এক ছেলে পঙ্গু সংসার চলেনা, টিনের ঘর দিয়া
পানি পরে। টেহা নাই তাই ঠিক হরতে পারিনা। রাজিয়া বেগম (৫৫) স্বামী মৃত জহুর
উদ্দিন তিনি বলেন,আমার কোন সন্তান নেই,স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। বাবা
নেই, মা নেই, আমি এই দুনিয়াতে একলা। পরের বাড়িতে কাজ করে পেট চালাই। গুচ্ছ
গ্রামে বসবাস কারী এরকম আরো অনেকেই কষ্টে জীবন যাপন পার করছেন।
শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা ওয়াদ্দা দিঘীরপাড় গুচ্ছ গ্রামের সদস্যরা নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক বলেন,আমাদের এই গুচ্ছ গ্রামের কিছু জমি দখল করে নিয়ে গেছে বাচ্চু
কন্টেকটার। দখল করে নিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছে। বাচ্ছুর ভয়ে কেউ কিছু ভলতে
পারে না।
শ্রী মঙ্গল পুকুর পাড় আদর্শ গুচ্ছ গ্রামের খোদেজা বেগম জানান,এই গুচ্ছ গামের
মানুষের কষ্টের সিমা নেই। এর কারন আমাদের কমিটি ভালো না। পুকুরের মাছের
হিসাব নেই। এখানে অনেকেই মাদকের সাথে জড়িয়ে পরেছে। পুকুর পারের বেশ কিছু
সরকারী গাছ রাতের আধারে কে জানি বিক্রি করে দিয়েছে। অনেকেই জমি বিক্রি করে
দিয়েছে। সন্ধা হলেই পুকুর পাড়ে গাঁজা মদের আড্ডা জমে। দেখার কেই নেই।
এবিষয়ে গুচ্ছ গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইদ্রিছ আলী বলেন,বর্তমানে যে কমিটি
তার কোন নিয়ম নিতী নেই। একটি পুকুর রয়েছে আমি যখন সভাপতি ছিলাম তখন
সেখান থেকে প্রতিবছর প্রতি সদস্য ২/৩হাজার করে টাকা পায়ত। বর্তমান সভাপতি
কিছুই দিতে পারেনা।
তিনি আরো বলেন কত বছর আগে সরকার ঘর করে দিয়েছিলো । ঐগুলা ঘর এখন ভেঙ্গে
গেছে। এখন আমরা দাবী জানায় যেনো আমাদের ঘরগুলা আবার ঠিক কইরা দেয়।
বর্তমান সভাপতি আব্দুছ সালাম বলেন,আমরা অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ। আমরা কোনমতে
টুকটাক কাম কইরা খাই। আমাদের দিন চলেনা। অনেকেই অচল হইয়া ঘরে পইরা রয়েছে।
ঘরের টিন ভাইংগা গেছে। আমাদের ঘর যেনো সরকার ঠিক করে দেয় এই দাবী জানাই
সরকারের কাছে।
এভাবেই গাজীপুর ইউনিয়নের শ্রী মঙ্গল পুকুর পাড় আদর্শ গুচ্ছ গ্রামের মানুষ ও
শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা ওয়াদ্দা দিঘীরপাড় গুচ্ছ গ্রামের মানুষ তাদের জীবন সংগ্রামের
কথাগুলো এই প্রতিবেদকের কাছে ব্যাক্ত করেন। তাদের দাবী একটাই,যেনো সরকারীভাবে
পুনরায় ভেঙ্গে যাওয়া ঘরগুলো মেরামত করে দেয়।