টি.আই সানি ,গাজীপুরঃ
বাল্য বিয়েঃ- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দিন দিন বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রভাবশালীদের সমর্থনের কারণে অধিকাংশ বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে এসব এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই বাল্যবিয়ে হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করলেও তেমন সুফল মিলছে না। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাল্যবিয়ে কমে যাওয়ার দাবি করছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মেয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়স হতে হবে। কিন্তু এসব এলাকায় মেয়ের বয়স ১৩ থেকে ১৪ এবং ছেলের বয়স ১৬ হলেই তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
এরকম বিয়ের প্রচলন রয়েছে অনেক সময় প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটছে। স¤প্রতি গাজীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে ১৩ বছরের মেয়ে ও ১৬ বছরের ছেলেকে বিয়ে দেয়ার খবর পেয়েছে প্রশাসন। (১২অক্টোব) উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের ইনা ফকিরের ছেলে সজল মিয়ার কন্যা ও ধনুয়া বড়চালা গ্রামের জসিম মার্কেট এলাকায় নজরুল ইসলামের কন্যা ৭ম শ্রেণী পড়–য়া এক ছাত্রী শাহিনুর (১৪),কে বেশ বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিয়েছে। এর আগে (১০অক্টোবর) গাজীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের কন্যা রিতু (১৪ কে বিয়ে দিয়েছে এ খবর পেয়েছে প্রশাসন ।
প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অতিক্রম করে মাধ্যমিক স্তরে পা রাখার পরে অনেকে ঝরে পড়ছে। এসএসসি পরীক্ষার পূর্বেই ভর্তিকৃত ছাত্রীদের ৫০ শতাংশ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভোট প্রাপ্তির আশায় ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে থাকেন। স্কুলের ভর্তি তারিখ, জন্ম নিবন্ধন যাচাই করলে তা ধরা পড়ে। বিয়ের আসরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ভুয়া জন্ম সনদ দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রারগণ বিবাহকার্য সম্পন্ন করেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা সে কারণে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেন না। গ্রামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গণসচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি সেবাদানকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজ হচ্ছে না। শ্রীপুর উপজেলার এরকম শত শত নারী নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়ছে। বাড়ছে সামাজিক নানা সমস্যা।
ফুটপাত অবৈধ দখলঃ- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে শ্রীপুরের জৈনা বাজার পর্যন্ত ৩০কিলোমিটারের অধিকাংশ ষ্টেশন জুড়েই বসে বাজার, এতে একদিকে চারলেনের অধিকাংশই দখল হয়ে যাচ্ছে অপরদিকে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে ঝুঁকি। নানাবিধ দিক বিবেচনায় গাজীপুরের প্রশাসন এসব বাজার সরানো ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করার ঘোষনা দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
মহাসড়ক দখলঃ-ফোরলেন উন্নতি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক দখল হয়ে অবৈধভাবে চলছে ইট-বালুর ব্যবসায়। এতে করে বাড়ছে দুর্ঘটনা ঝুঁকির প্রবণতা। অথচ মহাসড়ক ফোরলেন করার পর যানবাহনের গতি অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোরলেনের মতো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের উপর এভাবে ব্যবসা করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর প্রশ্ন জেগেছে সকলের। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শেষ সিমানা জৈনাবাজার হইতে গাজীপুরের সালনা পর্যন্ত এই ফোরলেনের পার্শ্বে মহাসড়কের পূর্ব অংশে অবস্থিত ফুটপাত থেকে প্রায় দুই-তিনশ গজ দখল করে ইট-বালির ব্যবসা চলছে নিয়মিত।
বালু ভরা ট্রলার দিয়ে ভেঙে ফেলছে নদীর ব্রীজের পিলার ঃ-কিন্তু দুভার্গ্য বশতঃ এই যে কতিপয় অসাধু বালু ব্যবসায়ী উক্ত সরু নদীতে বড়,বড় বালু বহনকারী কোর্গো চলাচলের ফলে ঢেউ সৃষ্টি হয়ে নদীর দুপাশের পাড় ভেঙ্গে নদী ভরাট হয়ে যা”েছ ব্রীজের পিলায়ারের মাঝখান দিয়ে বড়,বড় বালু বহনকারী কার্গো চলাচলের সময় ব্রীজের পিলায়ারের সাথে ধাক্কা লেগে ব্রীজের পিলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্রীজগুলি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। । ব্রিজ সংলগ্ন কয়েকজন দোকানদার জানান, এখানকার বালু মাটিতে সামান্য গর্ত করার ফলে তা ধসে পড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে গর্ত সৃষ্টি ও মাটি ধসে পড়ার ফলে ব্রিজটি চরম হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় যেভাবে নদী দখল করে বালু ভরা ট্রলার দিয়ে আরসিসি পিলার ভেঙে ফেলছে তাতে তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীসহ বাজারের ¯’ানীয় লোকজন নদী দখল বন্ধে ও ব্রিজ রক্ষার্থে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্থকেপ কামনা করেছেন।
সড়কের বেহাল অবস্থাঃ-গাজীপুরের শ্রীপুরে জৈনাবাজার-শৈলাট আট কিলোমিটার সড়কটি এখন লক্ষাধিক লোকের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। শিল্পকারখানার ভারী যানবাহন চলা ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের আকার এখন আর নেই। পুরো সড়কের মাঝে তৈরী হয়েছে বড় বড় গর্ত, দূর থেকে দেখে মনে হবে এটা যেন কোন জলাধার, এতে চলতে গিয়ে ছোট ছোট দুর্ঘটনার মধ্যেও পড়তে হচ্ছে অনেকেই।
গুচ্ছ গ্রামে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইঃ-গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ২টি গুচ্ছ গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই, একটি ২নং গাজীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত,আরেকটি শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা দিঘীরপাড় অবস্থিত। দুইটি গুচ্ছ গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষের মাঝে প্রতিনিয়ত চলছে বাঁচার লড়াই। এদের জীবনযাত্রা অতীব দারিদ্র সীমার নিচে। ভালো নেই কেউ। বুধবার (১০ অক্টোবর) ২নং গাজীপুর ইউনিয়নের শ্রী মঙ্গল পুকুর পাড় আদর্শ গুচ্ছ গ্রাম ও শ্রীপুর পৌর এলার টেংরা ওয়াদ্দা দিঘীরপাড় গুচ্ছ গ্রাম থেকে সরেজমিনে ঘুরে জানা যায় এদের কষ্টের কথা।
জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ঃ- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নে জনবসতি এলাকা তালতলি মুরগীর বাজার এলাকায় কাঠ পুড়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। এর নির্গত ধোয়ায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পরেছে।অভিযোগ রয়েছে, জনবসতি এলাকা তালতলি মুরগীর বাজার পেপার কারখানার পাশে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে হাবিবুর প্রধানের জমি ভাড়া নিয়ে,কয়েকজন অসাদু কাঠ ব্যবসায়ীর যোগ সাজেসে কয়লা ভাটাটি নির্মাণ করে কয়লা তৈয়ারী করে ব্যবসা করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জনবসতিপূর্ন এলাকায় নির্মাণ করা কয়লার ভাটায় বিশাল আকৃতির নয়টি চুলার গুমবজ বসানো হয়েছে। এসব চুলাগুলো থেকে নির্গত হচ্ছে ধোঁয়া।
মসলার গুড়াতে ক্যামিকেলঃ- কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় মসলার গুড়াতে ক্যামিকেল মিশিয়ে বাজার জাতকরন করতেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ভিবিন্ন বাজাররে পাল্লা দিয়ে ক্যামিকেল মিশানো হচ্ছে,হলুদ মরিচের গুড়াসহ সকল প্রকার মসলার মধ্যে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,জৈনাবাজার,এমসি,বরমী,কাওরাইদ,শ্রীপুর,গাজীপুর,বাঁশবাড়ি,মাওনাসহ ভিবিন্ন রাইচ মিলে হলুদ মরিচের গুড়ার মধ্যে ভিবিন্ন প্রকার ক্যামিকেল মিশিয়ে বাজার জাত করন করছে শত শত মণ । এতে করে জনজীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে,এসব ক্যামিকেল মিশানো গুড়া রান্নার কাজে ব্যবহার করে খাবার তৈয়ারী করে খাবার খেলে,মানুষের নানান ধরনের রোগবালাই হতে পারে। বিষেশ করে শিশুদের বেলায় অনেক ঝুঁকি থাকে,এবং ক্যানসার সহ ভিবিন্ন ধরনের রুগে আক্রান্ত হতে পারে।
এই সকল বিষয়ে শ্রীপুরের প্রশাসনের কাছে অনেক বার অভিযোগ করে জানানো হয়েছে। এবং এসব বিষয় নিয়ে বার বার সংবাদ মধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেও কোনো প্রকার ভালো কিছু পায়নি সাধারন জনগন। শ্রীপুরের প্রশাসন দেখেও যেন দেখেনা।