নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঢাকার সাভার-আশুলিয়ার ২০ মাইল, নয়ারহাট, শ্রীপুর, ভাদাইল মোড়, নরসিংহপুর, জামগড়াসহ বিভিন্ন রোডে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করছে, এর মধ্যে বেশিরভাগ গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই।
বিশেষ করে পথচারীরা কেউ ট্রাফিক আইন মানছেন না। অন্যদিকে মান-ফি, মাসিক চাঁদা দিয়ে চলছে লাইসেন্সবিহীন গাড়িগুলো, এর কারণে চালকরা যেদিক খুশি সেদিক গাড়ি চালায়, কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এ যেন দেখার কেউ নেই।
অন্যদিকে ফ্লাইওভার ব্রিজগুলো থাকলেও সেই ব্রিজ দিয়ে পারাপার হয় না বেশিরভাগ পথচারীরা। দেখা যায়, জনসাধারণ এলোমেলো ভাবে রাস্তা পারাপার হয়। মাথার উপর ব্রিজে থাকলেও ওই ব্রীজের নিচ দিয়ে লোকজন চলাচল করেন এ যেন দেখার কেউ নেই। “ঝুঁকিপূর্ণভাবে আড়াআড়ি করে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই”।
১৯ অক্টোবর ২০১৮ইং সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবীনগর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যে কয়েকটি ব্রিজ আছে সব ব্রিজেই প্রায় একরকম চিত্র। প্রায়ই সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। এসব লাশ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন মন্তব্য করে থাকেন। পত্রিকার পাতায় প্রায়ই দেখা যায় লাশ উদ্ধারের খবর। “দেশের প্রায় ৬৪ জেলা ও উপজেলা থেকে আসা লাখ লাখ মানুষ সাভার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে কর্মমুখী”।
বিশেষ করে “যানবাহনের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচলের ফলে যে কোনো সময়ই ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা”।
বিভিন্ন এলাকার গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন দোকানী মত প্রকাশ করলেন। তারা বলেন, এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায়ই লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরেও নিচ দিয়ে রাস্তা ক্রস করার কারণ জানতে চাইলে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বেশিরভাগই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এড়িয়ে গেছেন। তারপরেও অন্তত ১৫-১৬জন নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং তারা বলেন, ‘আজই প্রথম’ রাস্তা ক্রস করেছেন। তবে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি কেউই। ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা ক্রস করার কারণ জানতে চাইলে পেশায় ব্যবসায়ি আজাদ বলেন, ‘আমি যখন নিচ দিয়ে রাস্তাপার হচ্ছিলাম, তখনই আমার বিবেকে বাধছিল। তারপরেও কিন্তু ভুলটা হয়ে গেছে আমার। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না। কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রী বলেন,‘সবাই রাস্তা ক্রস করেন, তাই আমিও করলাম। চাকরিজীবী একজন নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘আসলে শরীরটা খারাপ হওয়ায় নিচ দিয়ে রাস্তা ক্রস করছি। এটা হয়ত আমার উচিৎ হয়নি। তবে নিচ দিয়ে রাস্তা ক্রসিংয়ের সুযোগ বন্ধ করে দিলে জনগণ বাধ্য হয়েই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতো বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।
দেখা যায়, ৭ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই যখন নিয়ম ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা ক্রস করছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে। তিনি অনুরোধ করে বলেন, তার নামটা ও ছবি যেন পত্রিকায় না দেয়া হয়। তার নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি স্বীকার করে সে বলেন, শরীরটা ভালো না, তাই নিচের রাস্তা ক্রস করেছি, ভাই আমার বিরুদ্ধে কিছু লিখেন না ভাই! তবে ভিন্ন চিত্রও রয়েছে এক দুইজন মাথায় বোঝা ও হাতে ভারি ব্যাগ থাকা সত্ত্বেও ওভারব্রিজ দিয়ে পার হয়েছেন।
উক্ত বিষয়ে বাঘ বাড়ি এলাকার নাজমুল ও জীবনসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, আপনার এই প্রতিবেদন আর কতদিন চলবে? সাংবাদিক বন্ধু ও ভাইদের জানা দরকার জনগণের সেবায় সাংবাদিক ও পুলিশ কাজ করছে, জনগণ যাতে নিরাপত্তায় রাস্তা পারাপার হতে পারে সেই ব্যবস্থা করাটা জরুরী।
অভিযোগ রয়েছে কিছু ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্য তাদের দালাল দিয়ে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা নিতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি সময় এবং কেউ কেউ চা সিগারেটের দোকানে ও হোটেলে সময় পার করেন। এর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, সরকারি জায়গা জমি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে রাস্তার দুইপাশই হকারদের দখল করে রেখেছে। ভিন্ন চিত্র দেখা যায়, ব্যস্ততম রোডগুলোতেও। কোনো ভাবেই “ট্রাফিক আইন মানছে না কেউ”।
বিশেষ করে কিছুদিন হলো পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে অনেক গাড়িও আটক করা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি। তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জনগণ আইন মানতে বাধ্য হবে বলে অনেকেরই অভিমত।
জানা গেছে, তিন চাকা গাড়ি আটক করে রেকার বিল ১০০০-২০০০/টাকা নিয়ে অনেক গাড়ি ছাড়ছেন পুলিশ। অভিযোগে অনেকেই দাবি করেন প্রতিদিন ও মাসিক চাঁদা নেয়া বন্ধ না হওয়ায় এখনও সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন রোডে তিন চাকার গাড়ি বন্ধ হয়নি। এমন কি লাইসেন্সবিহীন গাড়ি পুলিশ সদস্য ধরলেই চালকরা বলেন, মান-ফি, আছে! প্রায় ৬০ ভাগ গাড়ি এই ভাবে চলছে, বলে অনেকেরই অভিমত, এর কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
উক্ত বিষয়ে জামগড়া পুলিশ বক্স এর টিআই আমজাদ হোসেন বলেন, হাইওয়ে ও মেইন রোডে তিন চাকা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরা এসব অবৈধ যানবাহন আটক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর চাঁদাবাজ বা দালাল সে যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন ধারাবাহিক ৪।
বাংলার প্রতিদিন/হেলাল শেখ
১৯ অক্টোবর ২০১৮