নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
ফিটনেসবিহীন যানবাহন লাইসেন্সবিহীন চালকের কারণে দূর্ঘটনা বাড়ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল রোড, সাভারের
নবীনগর-মানিকগঞ্জ রোড, বাইপাইল-আবাদুল্লাপুর রোডসহ ঢাকা জেলার সাভার আশুলিয়ায় ফিটনেসবিহীন অবৈধ
যানবাহনে ১৮ বছরের নিচে বয়সের চালক হওয়ায় অসাবধানতায় গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে
এবং যানজটের সৃষ্টি হয় বলে অনেকেই জানান। সেই সাথে এসব গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা
সিস্টেম মান-ফি চালু রাখার কারণে তুলনামূলক ভাবে মামলা করা হয় না। এতে সরকারের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে
যানবাহন সেক্টর থেকে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট উপর মহলের পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
করছেন সচেতন মহল জনগণ।
শনিবার ও রবিবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দালাল ও লাইনম্যান এর মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি পয়েন্ট থেকে
প্রতিদিন ও মাসিক চাঁদা সিস্টেম চালু রেখে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে একটি মহল। জানা গেছে, জাকির
নামের এক ব্যক্তি আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে মাহিন্দ্রাসহ তিন চাকা গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করতো লাইনম্যান
হিসেবে। প্রতিসাসে ৬-৭ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে জাকির জানায়। এরপর জাকির তার আদায়কৃত
কয়েক লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে দিনে মাহিন্দ্রা নামক অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ করেন সংশ্লিষ্ট
পুলিশ প্রশাসন। জানা যায়, এরপর জিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে আবার রাতের ৮টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত
মাহিন্দ্রা চালানোর চেষ্টা করে সে পরিকল্পনা বিফল হয়। এ বিষয়ে জিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার
কিছু সম্মানিত ব্যক্তি ও বাইপাইল ও জামগড়ায় ডিউটিরত সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের সাথে মৌখিক আলাপ
করেই রাতে মাহিন্দ্রা গাড়ি চালানো হয় একদিন মাত্র। এরপর মাহিন্দ্রার চালকরা এক দুইজন সম্মানিত ব্যক্তির নাম
ভাঙ্গিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে, এটা জানার পর তাদের কয়েকেজনকে ধরে সাবধান করে দেয়া হয় যেন তারা এমনটি
আর না করে। তিনি বলেন, এখন যেসকল অবৈধ তিন চাকা গাড়ি চলছে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।
জানা গেছে, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হাইওয়ে রোডে
কোনো প্রকার তিন চাকা যানবাহন চলবে না। আর সারাদেশেই অভিযান চলছে ফিটনেসবিহীন যান ও
লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে নাজমুল, মাসুদ ও শাহিন বলেন, সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন রোডে
এখনও হাজার হাজার অবৈধ গাড়ি চলছে। বেশিরভাগ গাড়িই মাসিক চাাঁদা (মান-ফি) দিয়ে বিভিন্ন ব্যানারে
চলছে। এগুলো হচ্ছে অবৈধ ব্যাটারী ও ইঞ্জিন চালিত অটোরিক্সা, টেম্পু, করিমন, নছিমন, স্যালো চালিত
যানবাহনসহ বিভিন্ন গাড়ি। এর সাথে মাহিন্দ্রা, সিএনজিসহ বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন যানবাহন অবাধে
চলছে। কিছু পুলিশ অফিসার মাঝে মধ্যে এসব গাড়ি আটক করেন এবং এক দুই হাজার করে টাকা নিয়ে ছেড়ে
দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
জানা গেছে, ২৪ নভেম্বর সাভার ও আশুলিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় এক মা ও ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
শনিবার সকালে সাভারের মজিদপুরে এবং দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় এ দূর্ঘটনা
ঘটে। নিহতরা হলেন, আফরিন আক্তার, ও তার পাঁচ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ এবং আরও এক নারী। এ বিষয়ে আশুলিয়া
থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক সাংবাদিকদের জানান, মোটরসাইকেল যোগে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে
নিজ গ্রাম মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থেকে সাভারের দিকে যাচ্ছিলেন সোহেল রানা। পথে নয়ারহাট নামক স্থানে
তারা এলে, তাদের পেছন থেকে একটি দ্রæতগ্রামী ট্রাক চাপা দিলে আফরিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর আহত
অবস্থায় তার ছেলেকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক আব্দুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত হোহেল রানা শেখ
রাসেল ক্লাবের ফুটবল খেলোয়ার বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, ঘাতক ট্রাকটি আটক করা সম্ভব হয়নি।
অনেকেই বলছেন যে, ট্রাকটির চালক ১৫-১৬ বছরের ছিলো। এরকম অনেক দূর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, এর কারণ
লাইসেন্সবিহীন চালকরাই বেশি দূর্ঘটনা ঘটায়।
এ বিষয়ে সাভার জোন ট্রাফিক পুলিশের (টিআই) আমজাদ হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, কোনো অবৈধ
গাড়ি আটক করতে জনগণের সহযোগিতা লাগবে না, এ বিষয়ে পুলিশই দেখবে। তাহলে জনগণের প্রশ্নঃ কেন বলা
হয় যে, পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ। আর অবৈধ যানবাহন আটক করে হাইওয়ে থানায় দেয়া হয়। মাহিন্দ্রা বিষয়ে
কথা বলতেই তিনি অন্যভাবে কৌশলে এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ইং সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদ বলেন, বাইপাইল-
আব্দুল্লাহপুর রোড নয়, হাইওয়ে রোডের বিষয়ে বলেন, তখন আশুলিয়ার শ্রীপুর প্রায় ২শতাধিক অবৈধ মাহিন্দ্রা
চলছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রীপুর একজন দুষ্টুলোকের মাধ্যমে মাহিন্দ্রা চালায় বিষয়টি আমি
দেখবো, আর তিন চাকা কোনো প্রকার গাড়ি হাইওয়ে রোডে চলবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা
নেয়া হবে বলে তিনি জানান।