অনলাইন ডেস্ক ঃ
নির্বাচন বানচাল করতেই পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়ে নির্বাচনী মাঠে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা জেনে গেছে সামান্যতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও তাদের ভরাডুবি হবে, ধানের শীষের বিপুল বিজয় হবে। তাই দেশজুড়ে এত সহিংসতা ও রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। নির্বাচনের শুরুতে তারা বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরাতে চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব স্বীকার করেছিলেন, মহাজোটের শরিকরা কৌশল হিসেবে এককভাবে প্রার্থী দিয়েছেন, যাতে বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে একতরফা নির্বাচন করা যায়, আবার নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলকও হয়। কিন্তু বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের মাঠে অনড় অবস্থায় আছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ এখন বেসামাল হয়ে পাবনার হেমায়েতপুরের হাসপাতালের অসুস্থ বাসিন্দাদের মতো কথা বলছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের লোকেরা যতো লুটপাট করেছে তার সব অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। জনগণের কাছে লুটপাটের পাই টু পাই হিসাব রয়েছে। আপনারা দেখবেন লুটপাটকারী আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছে। তারা দেশে ফিরছেন না। অনেক নেতাকর্মী ভিসা-টিকেট লাগিয়ে রেখেছে। আপনারা গণমাধ্যমের কর্মী, আপনারা যাচাই করে দেখুন, জানুয়ারি পর্যন্ত সব এয়ারলাইন্সের টিকেট বুক হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, এরা কারা। এরা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা খোঁজ নিন। নির্বাচনের পরে কি হয় এই আতঙ্কে জনগণের টাকা আত্মসাৎকারীরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এবার আর ২০১৪ সালের মতো ভোট ডাকাতি করা যাবে না। একতরফা ভোট করা যাবে না। তাই সেনাবাহিনী নামানোর আগেই নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা চালাচ্ছে লুটপাটকারীরা। রক্তাক্ত করা হচ্ছে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থীদের। এতদিন প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচারণায় হামলা-গুলি চালানোর পর এখন হত্যার রাজনীতি বেছে নিয়েছে তারা। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে খুব পরিকল্পিতভাবে। গতরাতে ঢাকায় ধানের শীষের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালানো হয়। সেখানে যুবদল নেতা রিপন মিয়াকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গতকাল চট্টগ্রামে একজন বিএনপি কর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাকে তাঁর বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে নির্বাচনের আগে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অথচ এবার নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের অসংখ্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী ক্যাডারদের হাতে লাইসেন্সবিহীন অস্ত্রের ছড়াছড়ি। এ কারণেই আওয়ামী ক্যাডাররা রক্ত ঝরাচ্ছে এবং আরো রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশব্যাপী পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অস্ত্রের হামলায় গত কয়েকদিনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের শুধু কর্মীরাই নয় নেতারাও ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। এরা সবাই ধানের শীষের প্রার্থী। গুলিতে গুরুতর আহত ধানের শীষের প্রার্থীরা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। অথচ নির্লজ্জ নির্বিকারের মতো মিথ্যাচার করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। দেশে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের দ্বারা রক্তপাতের জন্য কেবলমাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনারই দায়ী। একমাত্র এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বেই এই প্রথম জাতীয় নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।’