‘আমি দেখি পাইপটা ফাটা। এতে পানিটা কম যাবে। তাই পাইপটা ধরে রাখলাম, যেন পানিটা বেশি যেতে পারে। যেন আগুনটা নিভে যেতে পারে।’
বেশ খানিকটা সময় বিশাল মোটা পাইপটা ধরে রেখেছিল ছোট্ট নাইম ইসলাম। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাইম নিজেও ভিজেছে পানিতে। তাতে কী? এতগুলো মানুষের জীবন যে তখন ঝুঁকিতে।
বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গেই কাজ করেছে নাইম। ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের ফাটা অংশ ধরে রাস্তায় বসে ছিল ছোট্ট নাইম। এতে পানিটা নষ্ট হয়নি। ওর ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এনটিভি অনলাইনকে নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলে নাইম।
একটা সময় ঘটনাস্থলে এত বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল যে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবীসহ অন্য যাঁরা আগুন নেভানো বা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁদের প্রচুর ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব মানুষের কারণে গণমাধ্যমকর্মীদেরও বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। আর এর মধ্যেই একটি শিশু পাইপ ধরে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা করছিল, যা ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
আজও বনানীতে ওই ভবনের সামনে যায় নাইম।
শিশুটির নাম মোহাম্মদ নাইম ইসলাম। সে কড়াইলের বৌবাজারে থাকে। ছোট একটি বোন আছে তার। বাবা রুহুল আমিন ডাব বিক্রি করেন এবং মা বাসায় কাজ করেন। আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সে। বড় হয়ে ‘পুলিশ অফিসার’ হতে চায়।
নাইম বলে, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অনেক ধন্যবাদ, তারা আগুন নেভাতে অনেক কষ্ট করেছে। আমার মনে হচ্ছিল, শত শত লোক মারা যাবে, যাতে না মারা যায়, এ জন্য আমি পাইপটা ধরে রেখিছিলাম, যাতে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আগুন নিভিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে। আমি বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চাই। পুলিশরা অনেক সহযোগিতা করেছে ফায়ার সার্ভিসের। আর তারা এখান থেকে অনেক লোককে দূরে পাঠায়া দিছে, যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি যায়। আর তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’
নাঈম বলে, ‘গুলশান-১-এ আগুন লাগার সময়েও আমি ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেছি। সেখানেও আমি পাইপ ধরে রাখছিলাম। ওই সময়ে আমাদের সঙ্গে অনেক ছেলে পাইপ ধরে রেখেছিল। তারা টাকা নিয়েছে, কিন্তু আমি কোনো টাকা নেই নাই। আমি যদি টাকা নিতাম, তাহলে মানুষ মনে করত আমি ঘুষ নিয়েছি।’
পাইপ ধরে রাখতে কষ্ট হয়েছে কি না জানতে চাইলে নাইম বলে, ‘এটা কোনো কষ্টের না। কিন্তু এত মানুষ মারা গেল, এটা কষ্ট লাগছে।’
আগুন লাগলে কী করা উচিত ভবনগুলোতে—এমন প্রশ্নের জবাবে নাইম বলে, ‘বালু আর পানি একসঙ্গে রাখতে হবে।’
ঘটনাস্থলে নাইমের পাশেই ছিলেন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। নাইম পুলিশ হতে চায় শুনে সাকিন নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে। সে গতকাল যা করেছে, যা দেখাইছে, তা সাহসের। আশা করি, তার আশা পূরণ হবে। আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’
উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজ বলেন, ‘ছোট বাচ্চা হলেও অনেক বুদ্ধিমান। ডিসিসিতে যখন আগুন লাগে, তখনো অনেক কাজ করেছে আমাদের সঙ্গে। নিজে থেকে কাজ করার মনোবৃত্তিটা বিরল।’
গতকাল দুপুরে বনানীর ২২ তলা ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুনের ঘটনায় আটকা পড়েন অনেকে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও আটকেপড়াদের উদ্ধারে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনের আট ও নয়তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। এর পরই একের পর লাশ বের করে আনা হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।