মহিনুল ইসলাম সুজন,নীলফামারী প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর জলঢাকায় কৈমারী ইউনিয়নের
বিন্যাকুড়ি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) আনুমানিক দেড়টার দিকে
ঢাকা বনানী এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জামাই ও মেয়ের মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে জামাই মাকসুদারের(৩১)বাড়ী পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার থানার মিজানুর রহমানের ছেলে ও
নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার ওই ইউনিয়নের আশরাফ আলীর মেয়ে (সাত মাসের অন্তঃসত্তা) রুমকি
বেগম (২৮)।
এরা দুইজনই (দম্পতি) ওই টাওয়ারে ট্রোভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিল। নিহত রুমকি তিন
ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। দূর্ভাগ্যক্রমে পাঁচ মাস আগে রুমকির মা মারা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে নিহতের পরিবারের কাঁন্না ও আর্তনাদের রোল। তাদের
আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যায়। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
নেমে এসেছে। নিহতের খালু শফিকুল ইসলাম (৪৭) বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে আমার ভাজতির
বিয়ে হয়।গত চারদিন আগে মেয়ে জামাই এলাকায় বেড়াতে আসে আর চারদিন পর তার মৃত্যুর খবর
শুনতে হলো।
ওই সময় কথা হয় নিহতের মেজো ভাই ও বিন্যাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আলী
রনির সাথে, তিনি কাঁন্না বিজরিত কন্ঠে বলেন, চলতি মাসের ১৭ তারিখ মোবাইল ফোনে কথা
হয় ছোট বোন রুমকির সাথে। সে বলেছিল ঈদুল ফেতরের ছুটিতে বেড়াতে আসবে। এই কথা
বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আর কিছুই বলতে পারেনি।
বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রকি (৩৫) বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। বাবা আশরাফ আলী বুকের ধন মেয়ে ও
জামাইকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কিছুদিন আগে স্ত্রী
হারানোর বেদনা ভূলতে পারিনি এর পর মা হারা মেয়েটিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি এতিম
হয়ে গেলাম। মেয়ে, জামাইকে হারানো সে বিস্বাস করতে পারছে না।
রুমকির চাচাতো বোন জয়া বেগম (৪২) বলেন, তার শিক্ষা জীবন ও বিবাহিত জীবন ঢাকায়। সে
মার্ষ্টাস পাশ করে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ওই এফ আর টাওয়ারে স্মামী, স্ত্রী দুজনে মিলে
মিশে চাকরি করে। রুমকি ১০ তালায় আর আমার ভগ্নিপতি ১১ তলায় কর্মরত ছিল। শুনেছি জীবন
বাঁচাতে ১১ তলা থেকে লাফ দিতে গিয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। আর রুমকি কালো ধোঁয়া ও
গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়। সে বিলাপ করে কাঁদছে আর বলছে তাদের ভাগ্যটাই খারাপ।
নিহতের চাচা ও জলঢাকা উপজেলা পরিসদের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ আলী কেঁদে, কেঁদে বলেন,
আমার ভাই আশরাফ আলী একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছে। তিনি গতকাল ঢাকায়
গিয়ে তার মেয়ের লাস বুঝে নিয়েছে, আর জামায়ের বাড়ী যেহুতু ঢাকায় সে কারনে তার লাস
পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চারদিন আগে মেয়ে জামাই বেড়াতে এসছিল। আর আজ বাবার কাঁদে মেয়ের লাস।
এটি কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুজাউদৌলা বলেন, নিহতের পরিবারের সাথে
সমবেদনা জ্ঞাপন ও জানাজায় অংশ গ্রহন করেছি। তিনি বলেন, জানাজা শেষে তার পারিবারিক
কবরস্থানে নিহতের মায়ের পাশে তাকে (চিরনিদ্রায়) দাফন করা হয়।
নিহত পরিবারগুলোর প্রতি শোক প্রকাশ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য নীলফামারী-৩ মেজর রানা (অবঃ)
মোহাম্মদ সোহেল বলেন, শোকসমাপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে
গভীর শোক প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বেলা আনুমানিক দেড়টার দিকে এফ আর টাওয়ারের ৯ তলায়
অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই অগ্নিকান্ডে নিহত হয় নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার
বিন্ন্যাকুড়ি গ্রামের দম্পতি রুমকি ও মাকসুদুর রহমান।