অনলাইন ডেস্কঃ
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘প্রচলিত আইনের প্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে, মাইন্ডসেটের পরিবর্তন আনতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে যে, শুধু চালকের ভুলে দুর্ঘটনা হয় না অন্যান্য কারণেও হয়।’
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ সড়ক : আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। ‘জাগো বাংলা ফাউন্ডেশন’ ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের এত উন্নয়ন সত্ত্বেও সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলো। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহাণি হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ আমাদের সন্তানদের জীবন প্রদীপ অকালে নিভে যাচ্ছে যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক-আমাদের সবারই প্রত্যাশা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবির প্রতি বর্তমান সরকারও শ্রদ্ধাশীল। আমাদের সন্তানতুল্য তরুণ প্রজন্ম রাজপথে নেমে সে দাবিই উচ্চকিত করে তুলেছে। আমরা চাই প্রতিটি সড়ক নিরাপদ হোক। সে বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই আমাদের সরকার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ৩৫ বছর আগের একটি পুরোনো আইন দিয়ে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই গত বছর আমাদের সরকার সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস করেছে। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ অধিদপ্তরসমূহ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, বৈধ লাইসেন্স নিশ্চিতকরণের মতো জরুরি কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহ কাজ করছে।’
আনিসুল হক আরো বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আইনই যে যথেষ্ট নয়। আইন থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিনি। কারণ আইন মেনে চলার মতো একটি সুস্থ্ সংস্কৃতি এবং সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন প্রণয়ন করে আমরা একটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব না। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবারই সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সড়কের কারিগরি ত্রুটি যেমন দূর করতে হবে, তেমনই গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিক তথা গাড়ির চালক, হেলপার, যাত্রী এবং পথচারীসহ সবার মিলিত প্রয়াস এবং সতর্কতা, দায়িত্বশীলতা খুবই জরুরি। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় যে বিপুল জনস্ফীতি, যে বিপুল যানবাহন-সে তুলনায় ট্রাফিক সংখ্যা অপ্রতুল। ট্রাফিক ব্যবস্থার আরো উন্নতি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনের চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দায়িত্বশীল ও চাপমুক্ত রাখতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সালে আমরা প্রণয়ন করেছি তা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই করেছি। তবে এই আইনের সুফল পেতে হলে তা যথাযথভাবে কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি বলে বিবেচনা করি। এই আইন যদি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। যানবাহনে গতিনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো গেলে বেপরোয়া গাড়ির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদেরও আন্তরিক এবং সদিচ্ছা থাকা চাই। দায়িত্ব পালনেও সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কেন না আমরা যদি এ সত্য মনে রাখি যে, আধুনিক গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় মানুষের অধিকার এবং মর্যাদা সমান। সুতরাং আইনের প্রয়োগও সবার জন্য সমান হতে হবে।’
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি নাসির আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিসিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়া, সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত বক্তব্য দেন।