দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদের ঋণখেলাপির পরিমাণ ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন, এমন ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তালিকা দেন। এই ৩০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি।
মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, এ তালিকায় শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির মধ্যে আছে, চট্টগ্রামের সামানাজ সুপার অয়েল এক হাজার ৪৯ কোটি টাকা, গাজীপুরের গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং ৯৮৪ কোটি, ঢাকা সাভারের রিমেক্স ফুটওয়্যার ৯৭৬ কোটি টাকা, ঢাকার কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম ৮২৮ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের মাহিন এন্টারপ্রাইজ ৮২৫ কোটি টাকা, ঢাকার রূপালী কম্পোজিট ৭৯৮ কোটি টাকা, ঢাকার ক্রিসেন্ট লেদার ওয়্যার ৭৭৬ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের এসএ অয়েল রিফাইনারি ৭০৭ কোটি টাকা, গাজীপুরের সুপ্রভ কম্পোজিট নিট ৬১০ কোটি টাকা ও গ্রামীণ শক্তি ৬০১ কোটি টাকা।
শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা আছে ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন ১৪ হাজার ৬১৭ জন। তাদের নেওয়া ঋণের মোট পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। তাদের মোট ঋণের মধ্যে বড় একটি অংশ খেলাপি রয়েছে। এর পরিমাণ এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।
ওয়ার্কার্স পার্টির সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৫৪ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ছিল ৫৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা দাঁড়ায় ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
মন্ত্রী নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা দেশি-বিদেশি কারণের কথা উল্লেখ করেন, যাতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে।
সেই সঙ্গে মুস্তফা কামাল ভালো ঋণ গ্রহীতাদের বেছে না নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে দায়ী করেন।
ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূলধনের ঘাটতি থাকা কিছু ব্যাংকে সরকার ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিমের প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গত বছর ৬ হাজার ১৬৩টি ঋণের বিপরীতে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে।
অগ্রণী ব্যাংক ২ হাজার ৮টি ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৪৯৪ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৬৬টি ঋণের বিপরীতে ৪৩৫ কোটি, রূপালী ব্যাংক ২০৩টি ঋণের বিপরীতে ১৩৪ কোটি, সোনালী ব্যাংক ১৪টি ঋণের বিপরীতে ৭৩ কোটি, জনতা ব্যাংক ২ হাজার ৪৭৩টি ঋণের বিপরীতে ৫৪ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৩৮০টি ঋণের বিপরীতে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ও বেসিক ব্যাংক ১৯টি ঋণের বিপরীতে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করে।
এ সময়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কোনো সুদ মওকুফ করেনি বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
এন/টি