স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদের বিষয়ে তদন্ত হবে। তদন্তের জন্যই তাঁকে (নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের পদ থেকে) সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
এক সাংবাদিক এসপি হারুনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার এখনো কেনো ব্যবস্থা নেয়নি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (এসপি হারুন) কাউকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন কি না কিংবা চাঁদা চেয়েছেন কি না, এ বিষয়টি তদন্তের পরই আমি বলতে পারব। তদন্তের আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না।’
তদন্ত কবে নাগাদ শুরু হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তদন্ত শুরু করার জন্যই আমরা তাঁকে সরিয়ে এনেছি। মাত্র তো তাঁকে সরিয়ে আনা হলো। এখন পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কার্যক্রমও শুরু হবে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ হাশেমের ছেলে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ও ছেলেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরে তাঁরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে শওকত আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদা নিয়ে এসপি হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর পুরোনো বিরোধ ছিল। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। সেখানেও হারুন বাগড়া দিচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর স্ত্রী-ছেলেকে একটি পার্টিতে নামিয়ে ঢাকা ক্লাবে আসেন। ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখেন তাঁর গাড়িটি নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গাড়ি আছে নারায়ণগঞ্জে। পরদিন রাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে হারুন একদল পুলিশ নিয়ে তাঁর গুলশানের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। এ বিষয়ে নিকটস্থ গুলশান থানাকে কিছু জানায়নি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরদিন তাঁর খোয়া যাওয়া গাড়িতে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে তাঁর ও তাঁর গাড়িচালকের নামে মামলা করেন। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শওকত আজিজ রাসেল তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেন।
শওকত আজিজের স্ত্রী-ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর গত শনিবার নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন একটি গল্প শোনান হারুন। তিনি দাবি করেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, এক হাজার ২০০ ইয়াবা বড়ি, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় গাড়িতে শওকতের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও সন্তান আনাব আজিজ ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এম এ হাসেম সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার দুই দিনের মাথায় গত ৩ নভেম্বর এসপি হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে ট্রেইনি রিজার্ভ (টিআর) পদে বদলি করা হয়। ওই বদলির পর এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জ ছাড়েননি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় এসপি হারুন আর রশীদকে দেখে মুখভার করে নেন মন্ত্রী। এসপির উদ্দেশে মাথা নেড়ে কিছু কথা বলে মন্ত্রী চলে আসেন। এরপর থেকে সেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি এসপিকে।
ওই ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ লাইনে হারুন অর রশীদকে বিদায় জানানো হয়।