ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ঘটনাস্থল থেকে জেলা প্রশাসক বলেন, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চলছে। আহতদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল, আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’
নিহতদের শনাক্ত করে তাঁদের লাশ বাড়ি পৌঁছানোর জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনা তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
হতাহতদের নাম-পরিচয় প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। তবে নিহতদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, ছয়জন নারী ও তিনজন শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
সংঘর্ষের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট পথে রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন পৌঁছেছে। তারা দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার আনিছুর রহমানসহ জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা উদ্ধারকাজ পর্যবেক্ষণ করছেন।
জেলা পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আখাউড়া, কসবা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকটি ইউনিট ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তাঁরাও যাত্রীদের নিরাপত্তা ও উদ্ধারকাজে তৎপর রয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় উদয়ন এক্সপ্রেসের অন্তত দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে গেছে। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এত মানুষের ভিড়ে উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে অনেকে উদ্ধারকাজে সহযোগিতাও করছেন।
কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল—জানতে চাইলে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের সিগন্যালম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার জামাল বলেন, ‘উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণ নিশীথা ট্রেন দুটির এই স্টেশনে ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল। সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের অভিমুখে প্রধান লাইন থেকে ১ নম্বর লাইনে তখন প্রবেশ করছিল। আর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে মন্দবাগ রেলস্টেশনে থামার জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল।’
‘উদয়নের অনেকগুলো বগিই তখন ১ নম্বর লাইনে চলে এসেছিল। এ সময় সিগন্যাল অমান্য করে তূর্ণা নিশীথা স্টেশনে না থেমে প্রধান লাইন বরাবর এগোতে থাকে। এতে উদয়ন এক্সপ্রেসের শেষদিকের কয়েকটি বগির ওপর তূর্ণা নিশীথার কয়েকটি বগি উঠে যায়। এতে উদয়ন এক্সপ্রেসের অন্তত তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়,’ যোগ করেন সিগন্যালম্যান সারোয়ার জামাল।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সারোয়ার জামাল এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, এরই মধ্যে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। আশা করা যায়, দুপুরেই আগেই এই পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এন/