দক্ষিণ আফ্রিকার সুন্দরী জোজিবিনি তুনঝির মাথায় সেরার মুকুট উঠেছে, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ শিরিন আক্তার শিলা আলোচনায় এসেছেন ‘মিস ইউনিভার্স ন্যাশনাল কস্টিউম’ ইভেন্টে লাল জামদানি শাড়ি ও রিকশার হুড পরে। রিকশার হুডে শোভা পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী রিকশা পেইন্ট। ইতিমধ্যে এই পোশাক বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে রিকশার হুডকে যে পোশাকের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেটা আগে কেউ এভাবে ভাবেনি। দুই কানে শোভা পেয়েছে ‘ক’ বর্ণের ঝোলানো দুল। গলায়ও ঝুলেছে বাংলা বর্ণমালা।
মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের শিরিন শিলার এই পোশাক দারুণ সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর ইনস্টাগ্রামের ছবির নিচে মন্তব্য করেছেন, ‘হৃদয় জয় করে নিলে’, ‘এভাবেও বাংলাদেশের পোশাক আর সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করা যায়!’, ‘অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে, আমি গর্বিত’ ইত্যাদি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আটলান্টার টাইলর পেরি স্টুডিও, ৮ ডিসেম্বর রাতে উপস্থাপক ঘোষণা করলেন, মিস ইউনিভার্স ২০১৯ হলেন, ২৬ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকার সুন্দরী জোজিবিনি তুনঝি। আর ছুটে এলেন গত আসরের বিজয়ী ফিলিপাইনের ক্যাটরিওনা গ্রে। জড়িয়ে ধরলেন, পরিয়ে দিলেন মিস ইউনিভার্স ২০১৯–এর বিজয়ীয় মুকুট। পিপল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আলো ঝলমলে সেই রাত।
প্রথম রানারআপ মিস পুয়ের্তো রিকো ম্যাডিসন অ্যান্ডারসন ও তৃতীয় হয়েছেন মিস মেক্সিকো সোফিয়া আরগান। ৯০টি দেশের ৯০ জন প্রতিযোগী নিয়ে শুরু হয় এই আসর। সেখান থেকে সেমিফাইনালে উঠে আসেন ২০ জন। যার মধ্যে ছিলেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ শিরিন আক্তার শিলা। তবে সেরা দশে স্থান পাননি তিনি।
সেরার মুকুট মাথায় পরার পর নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তুনঝি বলেন, ‘আমি এমন এক দেশে বেড়ে উঠেছি, যেখানে প্রায় সব নারী দেখতে আমার মতো, সেখানকার সবার ত্বক ও চুল আমার মতোই, তবে সেখানে কখনো কাউকে এ জন্য সুন্দর মনে করা হয় না।’ তিনি শেষ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি মনে করি, এখন এটি থামানোর সময় এসে গেছে। আমি চাই শিশুরা আমার দিকে তাকাবে, আমাকে দেখতে চাইবে।’
মিস ইউনিভার্স ২০১৯–এর মুকুটজয়ের পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে জোজিবিনি তুনঝি বলেন, ‘আমি শৈল্পিক। কালোর ভেতর সৌন্দর্য খুঁজে পেতে সমাজের অনেক দিন লেগে গেল। কিন্তু আশার কথা হলো, তবু তো দেরিতে হলেও এই সৌন্দর্য চোখে পড়ল পৃথিবীর! এভাবে কালো বর্ণের নারীরা সমাজে নিজেদের স্থান করে নেবে। কালো নতুনভাবে সৌন্দর্যের অর্থ তৈরি করবে। দক্ষিণ অফ্রিকা সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে যাবে।’
এরপর জোজিবিন তুনঝি আরও বলেন, ‘আমরা যা করি, আমাদের প্রতিটা কাজ ফিরে আসে। প্রতিফলন থাকে। তাই আমরা সবাই মিলে যদি পরিবর্তনের কথা বলি, তবেই বদলে যাবে পৃথিবী।’
জোজিবিনি তুনঝি দক্ষিণ আফ্রিকার তসলো শহরে বাস করেন, পেশায় জনসংযোগ কর্মকর্তা। তিনি মূলত নারী সহিংসতা নিয়ে কাজ করেন। মিস ইউনিভার্সের অফিশিয়াল পেজে তাঁর বায়োতে লেখা হয়েছে, ‘তার সমস্ত সামাজিক কর্মকাণ্ড জেন্ডার বিষয়ে মানুষের প্রথাগত ধারণা বদলানোর জন্য। তিনি স্বাভাবিক সৌন্দর্যের আধার। নারীরা যে যেমন, তিনি তাদের সেভাবেই আত্মবিশ্বাসী আর সুন্দর হতে পরামর্শ দেন।