বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কবে হবে জাতীয় নির্বাচন, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ মোরেলগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার উদ্বোধন জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কখন, যা বললেন মির্জা ফখরুল গুম-খুনে আর জড়াবে না র‍্যাব : মহাপরিচালক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম সমর্থন করে না ভারতের মোদি সরকার সোনারগাঁয়ে দুটি চুনা কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন পাঁচবিবিতে জনবল সংকট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ক্যারিবিয়ান জয়ের পর তাসকিন-তাইজুল যা বললেন

বাদুড়িয়ায় ‘কলেজ’ খুলে প্রশিক্ষণ, প্রৌঢ়দের ‘বাংলা গ্যাং’ ত্রাস পূর্ব উপকূলের ট্রেনে

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ৩০২ বার পড়া হয়েছে

সকলেরই গড় বয়স প্রায় ৫৫। কয়েক জনের বয়স আবার ষাটেরও বেশি। প্রত্যেকেই বাংলাভাষী। আর এই প্রবীণ নাগরিকদের ‘বাংলা গ্যাং’-এর দাপটে ঘুম ছুটেছে রেল পুলিশের! কারণ, গোটা পূর্ব উপকূল ধরে, ভুবনেশ্বর থেকে চেন্নাই— ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে পর পর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের দাবি, এর পিছনে রয়েছে এই ‘বাংলা গ্যাং’। আর তার মাথা বসে রয়েছে এ রাজ্যেই!

বুধবার ভোরে ভুবনেশ্বর থেকে চেন্নাইগামী একটি ট্রেনের স্লিপার কোচের এক যাত্রী বিশাখাপত্তনম স্টেশনে রেল পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি জানান, চলন্ত ট্রেন থেকে তাঁর গলার সোনার হার চুরি গিয়েছে। ওই যাত্রী রেল পুলিশকে জানান, বিশাখাপত্তনমের আগে ভিজিয়ানাগ্রাম স্টেশনে যখন ট্রেনটি দাঁড়ায়, তখনও তাঁর গলায় হার ছিল। ওই যাত্রী পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বার্থের কাছে এক বয়স্ক ব্যক্তিকে তিনি দেখেছিলেন সেই সময়ে।

আরও পড়ুুন:‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার ডাক মমতার, কটাক্ষ বিরোধীদের
আরও পড়ুন:ভোট হস্তান্তর হয় কি? বিতর্ক বিধানসভায়

গত কয়েক মাসে এ রকম একাধিক চুরির অভিযোগ পেয়েছিল রেল পুলিশ। যেখানে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেছিলেন, বার্থের কাছে থাকা বয়স্ক ব্যক্তির কথা। বিশাখাপত্তনম রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে হেতু ভিজিয়ানাগ্রাম এবং বিশাখাপত্তনমের মধ্যে অন্য কোথাও ওই ট্রেন দাঁড়ায়নি, সেখান থেকে আমাদের সন্দেহ হয়, ছিনতাইকারীরা বিশাখাপত্তনমেই নেমেছে।” সেই সূত্র ধরেই স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখতে গিয়ে কয়েক জন বয়স্ক ব্যক্তির একটি দলকে চিহ্নিত করা হয়। ওই দলটি স্টেশনের ঠিক বাইরেই বসে ছিল।

পুলিশ ওই দলটিকে আটক করে তল্লাশি করতেই অভিযোগকারীর খোয়া যাওয়া সোনার হার পাওয়া যায়। সঙ্গে মেলে ২১০ গ্রাম সোনার গয়না। পুলিশের দাবি, সবটাই লুঠের মাল। বিশাখাপত্তনম রেল পুলিশ এর পরেই আট জনের দলটিকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা হল সুশান্ত রায় (৫২), শ্রীবাস দাস (৪৫), দিনু বিশ্বাস (৬০), তপন ভট্টাচার্য (৬২), রবি সেন (৬২), জয় বিশ্বাস (৪৯), ভোলা মণ্ডল (৫২) এবং সমীর মিস্ত্রি (৫৮)। এরা প্রত্যেকেই বনগাঁ, বসিরহাট, গোপালনগর-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

ধৃতদের জেরা করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, এরা রীতি মতো টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠে। টার্গেট মূলত স্লিপার কামরা। কামরার এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাতায়াতের পথে প্রথমে এরা দেখে নেয়, কার গলায় সোনার হার আছে? সেই অনুসারে শিকার নির্দিষ্ট করে নেওয়া হয়। তার পর রাতে যখন যাত্রীরা ঘুমিয়ে থাকেন তখন নিপুণ হাতে এক টানে গলা থেকে ছিঁড়ে নেওয়া হয় সোনার হার। স্লিপারে পাহারা কম থাকে শীতাতপ কামরার থেকে। সে কারণেই স্লিপার ক্লাসকেই বেছে নেয় এরা। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ধৃতরা আরও স্বীকার করেছেন যে ভুবনেশ্বর পেরনোর পর থেকে এঁরা ‘কাজ’ শুরু করে।

অপরাধের কায়দার থেকেও তদন্তকারীদের অবাক করেছে ধৃতদের জেরা করে উঠে আসা অন্য এক তথ্য। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘জেরায় এরা দাবি করেছে, গ্যাং-এর মাথার নাম গণেশ সরকার নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি বসিরহাটে।” তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়াতে রীতি মতো প্রশিক্ষণ শিবির খুলে বসেছে ওই গণেশ সরকার। সেখানে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কী ভাবে ঘুমন্ত যাত্রীর গলা থেকে সোনার হার বা গয়না হাতাতে হবে।

সেই প্রশিক্ষণে দড় হয়ে উঠলে ৭ থেকে ১০ জনের একটি দলকে পাঠানো হয় অপারেশনে। পাঁচ থেকে সাত দিনের যাত্রা। পর পর ট্রেন বদলে অপারেশন। তার পর সোজা ডেরায় ফেরা। ওই পাঁচ সাত দিনের খরচ-খরচাও দলের পাণ্ডা গণেশই জোগায় দলের সদস্যদের। ট্রেন ভাড়া থেকে শুরু করে খাবার খরচ— সঙ্গে জরুরি খরচের জন্য তহবিল। সেই দল লুঠের মাল নিয়ে ফিরে এলে শুরু হয় ভাগ বাঁটোয়ারা। তার একটা বড় অংশই নেয় দলের পাণ্ডা।  তদন্তকারীদের দাবি, দলে বয়স্কদের নিয়োগ করা হয় যাতে, যাত্রীরা সন্দেহ না করেন।

বিশাখাপত্তনম রেল পুলিশ এবং রেল সুরক্ষা বাহিনীর বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে গণেশকে পাকড়াও করতে। যোগাযোগ করা হয়েছে এ রাজ্যের রেল পুলিশ এবং বসিরহাট জেলা পুলিশকেও। রাজ্যের রেল পুলিশ সূত্রে খবর, দিনু বিশ্বাস, রবি সেন শিয়ালদহ শাখার কুখ্যাত ছিনতাইবাজ। শিয়ালদহ জিআরপি অনেক বার এঁদের গ্রেফতার করেছে। রবি সেনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায়। এক রেল পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এখানে তাড়া খেয়ে এখন নতুন জায়গায় ওরা অপরাধ শুরু করেছে।” রেল পুলিশের ওই আধিকারিক গণেশ সরকারকেও চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গণেশ শিয়ালদহ লাইনে আগেও বড় গ্যাং চালাত। এর আগেও অনেক বার গ্রেফতার হয়েছে সে।’’

anbp

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451