উষ্মা যে রয়েছে নবান্নে, তা বোঝা যাচ্ছিল বৃহস্পতিবার থেকেই। শুক্রবার ক্ষোভটা প্রকাশ্যে চলে এল। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধনে তাঁকে ‘ডাকা হয়নি’ বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। যে প্রকল্পের জন্য তাঁকে ‘চোখের জল পর্যন্ত ফেলতে হয়েছে’, তার উদ্বোধনের কথা জানানোও হল না! বিধানসভায় শুক্রবার এ ভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে গতকাল থেকেই অসৌজন্যের অভিযোগ তুলছিলেন তৃণমূল নেতারা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে না জানিয়ে যে ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কলকাতায় এসে মেট্রোরেল চালু করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন, তা রাজ্যের ‘স্বাভিমানে আঘাত’— বলেন রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চুপ ছিলেন। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ছ’টি স্টেশনে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চলাচল শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে মমতা বললেন, ‘‘বাংলায় প্রচুর রেলের প্রকল্প এনে দিয়েছি। এই প্রকল্পগুলোর জন্য আমাকে চোখের জল পর্যন্ত ফেলতে হয়েছে। সব কিছু করার পরেও উদ্বোধনের দিন এক বার জানানো হল না!’’
বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যে ভাষণ দিয়েছিলেন বিধানসভায়, তার উপরে এ দিন ধন্যবাদ জ্ঞাপক ভাষণ দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ভাষণেই তিনি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রসঙ্গ আনেন। মমতা বলেন, ‘‘আমার খুব খারাপ লাগছে। এগুলো আমি বাইরে বলি না। নিজেদেরই দুর্বলতা বলে মনে হয়।’’ ইউপিএ জমানায় এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প আদায় করে আনার জন্য তাঁকে কী ভূমিকা নিতে হয়েছিল, এ দিন সে নিয়েও কিছু কথা মমতা বলেন। তাঁর উদ্যোগে যে প্রকল্প বাংলা পেয়েছিল, সেই প্রকল্পের উদ্বোধনে তাঁকে কেন ডাকা হল না, সে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘এত কিছু করার পরেও ডাকল না, এটাই দুঃখ। ছবির দরকার ছিল না। খবর তো দিতে পারত।’’
রেলের তরফে অবশ্য বৃহস্পতিবার থেকেই ঠিক উল্টো দাবি করা হচ্ছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য যে আমন্ত্রণ পত্র ছাপানো হয়েছিল, তাতে কেন মুখ্যমন্ত্রীর নাম নেই, প্রথমে তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। সে প্রসঙ্গে কোনও ব্যাখ্যা রেলের তরফে দেওয়া হয়নি। তবে নবান্নে এক আধিকারিককে পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে রেল গতকালই জানিয়েছিল। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় নিজে দাবি করেছেন যে, তিনি কোনও আমন্ত্রণ পাননি। তার প্রেক্ষিতে শুক্রবার ফের মুখ খুলেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। নবান্নে গিয়ে রেলের এক আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন বলে মেট্রোর তরফে এ দিন ফের জানানো হয়েছে।
জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী তথা এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষকে বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারকে যে আক্রমণ করেছিলেন বামেরা, এ দিন বিধানসভায় তারও জবাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘হাজরা ভুলে গিয়েছেন? (মমতার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল)’’ বিধানসভায় এ দিন বামেদের উদ্দেশে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম জমানায় তিনি যখন বিরোধী শিবিরে ছিলেন, তখন প্রশাসন তাঁর সঙ্গে বা বিরোধী দলের সঙ্গে কী আচরণ করত, সে কথাই এ দিনসুজন চক্রবর্তীদের মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
anbp