নিয়ম অনুযায়ী, নগদ অংশ সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট) ও বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআরের (স্টেটিউটরি লিক্যুইডিটি রেশিও) অর্থ জমা রাখতে পারছে না পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স)। এ জন্য ব্যাংকটিকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সুবিধা দিয়েছে। এর বাইরে আরও সুবিধার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকে জমা রাখা গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষায় ওই আমানতের ১৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। নগদ অর্থ, বিল-বন্ডের মাধ্যমে এ অর্থ জমা রাখতে পারে ব্যাংকগুলো। দীর্ঘদিন ধরে সিআরআর ও এসএলআরের অর্থ জমা রাখতে না পারায় পদ্মা ব্যাংককে প্রায় ১৪১ কোটি টাকা দণ্ড সুদ ও জরিমানা করা হয়। এখন সেই জরিমানার টাকা জমা দিতে ব্যাংকটিকে ৫ বছর সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এ জন্য ব্যাংকটি ৬ মাস বাড়তি সময় বা গ্রেস পিরিয়ড পাবে। গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারা অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যাংকটিকে এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ব্যাংকটি সমস্যায় আছে। এ জন্য ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার অনুমতি দিলে এসএলআর রাখতে হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ সুবিধা দেওয়ার ফলে গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হবে। কারণ, এসএলআর রাখা হয় আমানতকে সুরক্ষিত করতে। এভাবে সুযোগ দিলে অন্য ব্যাংকগুলোও একই দাবি তুলবে। ব্যাংকটি যেহেতু সমস্যায় আছে, তাই একটু সময় দেওয়া যেতে পারে।
গত ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপিত নথিপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির সিআরআর সংরক্ষণে ঘাটতি ছিল। আর ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত এসএলআর সংরক্ষণে ঘাটতি রয়েছে। সিআরআর ঘাটতির জন্য ব্যাংকটিকে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু তাও দিতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি। ফলে সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতির দণ্ড সুদ ও জরিমানা মিলে এখন দাঁড়িয়েছে ১৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১৯ সালের শুরুতে ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক। এরপর গত ৪ নভেম্বর দণ্ড সুদ ও জরিমানা মওকুফ চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে ব্যাংকটি। পাশাপাশি ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসএলআর সংরক্ষণ ও সংরক্ষণের হার প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু কানাডা থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন সিআরআর রাখতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে এসএলআর সংরক্ষণে মাঝেমধ্যে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা জরিমানা মওকুফ ও এসএলআর থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। এ ছাড় পেলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহ শেষে সিআরআর বাবদ আমানতের সাড়ে ৫ শতাংশ অর্থ নগদ ও এসএলআর বাবদ আমানতের সাড়ে ১৩ শতাংশ অর্থ ও আর্থিক উপকরণ জমা রাখতে হয়।যে পরিমাণ সিআরআর ঘাটতি হয়, তার ওপর ৫ শতাংশ হারে প্রতিদিন জরিমানা গুনতে হয়। আর এসএলআর ঘাটতির ওপর স্পেশাল রেপো (বর্তমানে প্রায় ৯ শতাংশ) পরিমাণ টাকা জরিমানা গুনতে হয়।
এর আগে সরকারি খাতের প্রবাসী কল্যাণ, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও এসএলআর সংরক্ষণ থেকে ছাড় পায়। বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার এখন রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।