বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কবে হবে জাতীয় নির্বাচন, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ মোরেলগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার উদ্বোধন জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কখন, যা বললেন মির্জা ফখরুল গুম-খুনে আর জড়াবে না র‍্যাব : মহাপরিচালক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম সমর্থন করে না ভারতের মোদি সরকার সোনারগাঁয়ে দুটি চুনা কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন পাঁচবিবিতে জনবল সংকট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ক্যারিবিয়ান জয়ের পর তাসকিন-তাইজুল যা বললেন

দিল্লি দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

দিল্লি দাঙ্গার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বুধবার যে সংখ্যাটা ছিল ২৭, বৃহস্পতিবার বিকেলে তা ৩৮ হয়ে যায়। আশঙ্কা, নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, উত্তর–পূর্ব দিল্লির উপদ্রুত এলাকাগুলোর সব জায়গায় এখনো পুলিশ ও অন্যরা পৌঁছাতে পারেনি। ইট, ছুরি, গুলি ও লাঠি–রডের ঘায়ে মারাত্মক আহত ৪৬ জন এখনো বিপদমুক্ত নন। মুস্তাফাবাদ থেকে অ্যাসিডে আক্রান্ত ৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এঁদের কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন।

দাঙ্গায় আহত ব্যক্তিদের যাঁরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদের তো বটেই, যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন, তাঁদের সব খরচও দিল্লি সরকার দেবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৃহস্পতিবার জানান। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়ার কথাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে আহতদেরও। দাঙ্গায় যাদের ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ পুড়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কেজরিওয়াল বলেন, দোষী হলে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু তার আগে দাঙ্গার রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার।

চার দিন পরেও দিল্লি পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে শয়ে শয়ে মানুষ ঘরছাড়া হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। উপদ্রুত এলাকাগুলোয় আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন ছড়ানো–ছিটানো। সারি সারি ঘর জ্বলে গেছে। পুড়ে গেছে গাড়ি, রিকশা, আসবাব। পুনর্বাসনের কী বন্দোবস্ত, কেউ জানে না। দুর্গত হিন্দুদের মুসলমান, আবার দুর্গত মুসলমানদের হিন্দুরা আশ্রয় দিয়েছে জায়গায় জায়গায়। প্রত্যেকের এক কথা—বাইরের লোকজন দলে দলে ঢুকে পড়ার পর পাড়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে। অভিযোগ, উত্তর প্রদেশের লাগোয়া জেলা থেকে শয়ে শয়ে দুষ্কৃতকারী তিন–চার দিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে তাদের কাছে হামলার নির্দেশ গেছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বুধবার উপদ্রুত এলাকায় গিয়ে জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা রক্ষার ভরসা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও দিল্লির পুলিশ কমিশনার গতকালও কোনো মন্তব্য করেননি। যদিও অমিত শাহ দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে কাল একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন।

বুধবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নীরব ছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সংবাদ সম্মেলন করে দাঙ্গার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি দায়ী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী নীরবতা ভাঙেন। বৃহস্পতিবার সোনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে ‘রাজধর্ম’ পালনে তাঁকে সক্রিয় হতে অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর সোনিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্র ও সদ্য গঠিত রাজ্য সরকার—দুই তরফই এই অবস্থার জন্য দায়ী। তিনি বলেন, সরকার যাতে রাজধর্ম পালন করে, সেই নির্দেশ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা অনুরোধ করেছেন। সোনিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চূড়ান্ত ব্যর্থ। তাঁকে বরখাস্ত করা উচিত।

তিন দিনের দাঙ্গায় দিল্লিতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০০। তাদের মধ্যে গুলিতে আহতের সংখ্যা ৪৬। বুধবার রাতেও উত্তর–পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা–জোহরাপুরী এলাকা থেকে গোলমালের খবর পাওয়া যায়। তবে মারাত্মক কিছু ঘটেনি। তিন দিন নিষ্ক্রিয় থাকা পুলিশ বৃহস্পতিবার কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। এলাকায় এলাকায় শান্তি কমিটিও সক্রিয়।

দিল্লি পুলিশকে বুধবার কাঠগড়ায় তুলেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতি এস মুরলীধর ও তালবন্ত সিং। হিংসায় ইন্ধন জোগাতে উসকানিমূলক ভাষণ দেওয়া সত্ত্বেও বিজেপির চার নেতার (যাঁর একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর) বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ কেন মামলা দেয়নি, বিচারপতি মুরলীধর সে জন্য দিল্লি পুলিশের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চোখের সামনে আরেকটা ১৯৮৪ হতে দেওয়া যায় না। সলিসিটর জেনারেলকে তিনি বলেছিলেন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে। সেই বিচারপতি মুরলীধরকে বুধবার রাতেই পাঞ্জাব–হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করা হয়। এ নিয়ে রাজনীতি তোলপাড়।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেন, ‘বিচারপতি লয়ার কথা মনে পড়ছে, যাঁকে বদলি করা হয়নি।’ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র লেখেন, ‘মধ্যরাতে বিচারপতি মুরলীধরের বদলির নির্দেশ মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। তবে নিশ্চিতভাবেই বেদনাদায়ক ও লজ্জার।’

বিজেপি অবশ্য এই বদলিকে ‘রুটিন’ বলতে চাইছে। আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট এই বদলিতে সায় দিয়েছিল। বিচারপতির মতামতও নেওয়া হয়েছিল। বদলির নির্দেশ সেই অনুযায়ী। বিজেপি এই দাবি জানালেও প্রথা অনুযায়ী মুরলীধরকে বদলির জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়নি। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

বিজেপির চার নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের সম্পর্কে দিল্লি পুলিশের বক্তব্য বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মুরলীধর। ইতিমধ্যে তাঁর বদলি এবং জনস্বার্থ–সম্পর্কিত এই মামলা প্রধান বিচারপতির এজলাসে স্থানান্তরিত হয়। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কাল আদালতকে বলেন, এ মুহূর্তে দিল্লি দাঙ্গার মোকাবিলায় পুলিশ ব্যস্ত। তা ছাড়া শুধু ওই চার নেতা নন, আরও অনেক নেতাই এ ধরনের উসকানি দিয়েছেন। কাজেই দিল্লি পুলিশকে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হোক। আদালত সেই দাবি মঞ্জুর করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451