দলবদল করলেন এক জন বাম কাউন্সিলর। যোগ দিলেন তৃণমূলে। আর রাজনৈতিক সেই কর্মকাণ্ডের গোটাটাই হল কলকাতা পুরসভার মেয়রের ঘরে। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতেই সে পর্ব সারা হল। কী ভাবে প্রশাসনিক দফতরের ভিতর এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরসভার মতো প্রশাসনিক দফতরকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা।
কলকাতা পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর রীতা চৌধুরী। শনিবার তিনি দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন। এ দিন দুপুরে ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে মেয়রের ঘরেই রীতার হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেওয়া হয়। সেই সময় মেয়রের ঘরে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার-সহ অনেকে।
এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বিতর্ক শুরু হয়। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রত্না রায় মজুমদার বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ভবনে, খোদ মেয়রের ঘরে বসে দলবদলের কাজ করা হল। পুরসভা তো কোনও দলের কার্যালয় নয়। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করেছে তৃণমূল। এটা ঠিক হয়নি। কেউ এক দল থেকে অন্য দলে যেতেই পারেন। কিন্তু, সেই দলবদল মেয়রের ঘরে বসে হবে কেন? আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’’
এর মধ্যে যদিও বিতর্কের কিছু দেখছেন না মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মেয়রের ঘরের ভিতর কী ভাবে রাজনৈতিক দলবদলের কাজ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার টেবিলে হয়নি। ঘরের ভিতরে একটা পাশে হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।’’
কিন্তু, বিরোধীরা মেয়রের এই যুক্তি মানতে নারাজ। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘এ রাজ্যে তো আইনকানুন কিছু নেই। নবান্নে বসে তৃণমূলের প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকের নামে দলীয় বৈঠক করেন। মেয়র তাঁর ঘরের ভিতর তৃণমূলের পতাকা জড়ো করে রেখেছেন। যাঁকে যখন মনে হচ্ছে, তৃণমূলের পতাকা দিয়ে দিচ্ছেন। অথবা কারও পতাকা কেড়ে নিচ্ছেন। বেনিয়মের নিয়ম চলছে রাজ্যে। এটা বেআইনি কাজ।’’
কংগ্রেসও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মেয়র হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে। পুরসভায় সেই মেয়রের ঘরে কোনও রাজনৈতিক কাজকর্ম হবে কেন? মেয়রের ঘরের ভিতর এমন কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি। খুবই বাজে হয়েছে। মেয়রের তো রাজনৈতিক দল আছে। দলের অফিসে গিয়ে এ সব করুন। কারও কোনও আপত্তি থাকবে না তাতে।’’
এ দিন পুরসভায় অধিবেশন ছিল। তার আগে ওই দলবদলের বিষয়টি হয় মেয়রের ঘরে। তবে এ প্রসঙ্গে রীতাদেবী কোনও মন্তব্য করেননি।