দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর অধিকার নিয়ে বিরোধ একটা বিশেষ মাত্রা নিতে চলেছে৷ ভারত বলছে, ‘দক্ষিণ চীন সাগর গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল পথ। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে এই সাগরে জাহাজ চলাচলের অবাধ স্বাধীনতা কেউ অস্বীকার করতে পারে না৷ এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এর স্থায়ী প্রভাব রয়েছে।
গত ১৬ জুলাই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে স্বাধীন ও মুক্ত চলাচলে পক্ষে ভারতের দৃঢ় অবস্থান। ভারত গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক নৌপথে অবাধ জাহাজ চলাচল এবং ওভারফ্লাইট বাণিজ্যের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অঞ্চলে চীনের একক মালিকানার দাবি প্রত্যাখ্যান করার পরে তিনি ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে এসব কথা বলেন।
শ্রীবাস্তব বলেন, ‘আমরা অতীতে বেশিরভাগ সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর আমাদের অবস্থানটি স্পষ্ট করে জানিয়েছি। এই ইস্যুতে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট এবং ধারাবাহিক হয়েছে। ভারত মনে করে দক্ষিণ চীন সাগর বৈশ্বিক সাধারণ অবস্থানের অংশ এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এর স্থায়ী প্রভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বিশেষত ইউএনসিএলওএস অনুসারে ভারত অবাধ জাহাজ চলাচল এবং ওভারফ্লাইটে নির্বিঘ্নে বাণিজ্যের স্বাধীনতার পক্ষে।
তিনি বলেন, ভারত এও বিশ্বাস করে যেকোন মতপার্থক্য হুমকি বা শক্তি প্রয়োগ না করে আইনী ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব।
গত ১৪ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছে, ‘বেইজিং যদি ভাবে তারা দক্ষিণ চীন সমুদ্রের একচ্ছত্র সম্রাট, তবে তারা খুব ভুল করছে। আমেরিকা তো এটা মানবেই না, উপরন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌম জলপথে ক্ষুণ্ন হলেও আমরা চুপ করে থাকব না।’ যুক্তরাষ্ট্রের এমন হুঁশিয়ারির পরই ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করতে সংবাদ সম্মেলন করেন অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ গোটা দক্ষিণ চীন সমুদ্রের ওপর একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করার চেষ্টা করছে চীন৷ ওই এলাকায় জাপান, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনও তাদের অধিকার দাবি করেছে৷ ভিয়েতনাম বলেছে, জাতিসংঘের নিয়মবিধি অনুযায়ী দক্ষিণ চীন সমুদ্রের আংশিক ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে৷
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি এড়াতে ভারত এর শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কথা বলেছে৷ ভারতের দাবি, আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন মেনে দক্ষিণ চীন সমুদ্রে সব দেশের জাহাজ চলাচল এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের অবাধ স্বাধীনতা ভারত সমর্থন করে৷ আশা করা যায়, দক্ষিণ চীন সাগর সংক্রান্ত ২০০২ সালের ঘোষণাপত্রের নির্দেশিকা রূপায়ণ করা সম্ভব হবে৷
উল্লেখ্য, পূর্ব আফ্রিকার উপকূল থেকে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত গোটা ভারত মহাসাগরীয় এলাকা ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি শক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যের ৫০ ভাগ হয় শুধুমাত্র দক্ষিণ চীন সমুদ্র দিয়ে৷