সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে হত্যার হুমকিদাতা মহসিন তালুদারকে (২৫) গ্রেপ্তারের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করবে র্যাব-৯। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এ খবর জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের পর মহসিনকে থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের রনসী গ্রামে অভিযান চালিয়ে আজ বেলা ১১টার দিকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-৯-এর সুনামগঞ্জ অঞ্চলের অধিনায়ক কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. ফয়সল আহমদ এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
মো. ফয়সল আহমদ জানান, র্যাব-৯-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুসা মো. শফিকুল ইসলাম ও তাঁর নেতৃত্বে রনসী গ্রামে অভিযান চালিয়ে মহসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মহসিন তালুকদার সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের তালুকদারপাড়ার বাসিন্দা। তিনি গতকাল সোমবার রাতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের রনসী গ্রামে তাঁর ভায়রার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এর আগে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) এ বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ফেসবুক লাইভে এসে সাকিব আল হাসানকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকেই হুমকিদাতা মহসিনকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে দা উঁচিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে হত্যার হুমকি দেন মহসিন তালুকদার। ভারতের কলকাতায় গিয়ে কালীপূজার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন, এমন দাবি করে হুমকি দেওয়া হয় সাকিবকে। এদিকে, কলকাতার ঘটনা নিয়ে সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন, তিনি পূজা উদ্বোধন করতে যাননি কিংবা করেননি। এ ছাড়া পুরো ঘটনার ব্যাখ্যাও সাকিব দিয়েছেন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সাকিব বলেন, ‘সব জায়গায় এসেছে আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। কিন্তু আসলে আমি পূজা উদ্বোধন করতে যাইনি, করিওনি। এটির প্রমাণ আপনারাও পাবেন। ওখানে অনেক সাংবাদিক ভাই ছিলেন, যাদের ওখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ ছাড়া কার্ডে লেখাও আছে কে আসলে পূজা উদ্বোধন করেছেন এবং সেটি উদ্বোধন হয়েছে আমি যাওয়ার আগেই। যে জায়গাটিতে আমাদের অনুষ্ঠানটি হয়েছে, সেটি পূজামণ্ডপ ছিল না। সেখানে একটি স্টেজ ছিল। পুরো অনুষ্ঠানটি সেখানে করা হয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চের পাশেই পূজামণ্ডপ ছিল। গাড়িতে আমার ওঠতে হবে, অনেক রাস্তা বন্ধ ছিল। তাই পূজামণ্ডপ পার হয়েই আমার যেতে হতো। যাওয়ার সময় পরেশ দা; যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাঁর অনুরোধে আমি প্রদীপ প্রজ্বালন করি। যেহেতু আমি কলকাতায় অনেকদিন খেলেছি, কলকাতার মানুষ আমাকে অনেক পছন্দ করেন। তাই সবার অনুরোধে সেখানে ছবি তুলতে দাঁড়াতে হয়। ছবি তুলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়, হাতাহাতিও হয় কিছুটা। সেই ঘটনার কারণে আসলে আমরা ওদিক দিয়ে আর যেতে পারিনি। পরে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। পুরো ঘটনাটি ছিল এ রকম। হ্যাঁ, যেটা হয়েছে, দুই মিনিটের মতো সময় আমি পূজামণ্ডপে ছিলাম। সেটি নিয়ে সবাই বলেছে। তারা ধারণা করছেন, আমি পূজার উদ্বোধন করেছি। যেটি আমি কখনই করিনি। একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে করব না। তার পরও হয়তো সেখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় সেটি আমি খেয়াল রাখব।’
আর ভক্তের ফোন ভাঙার খবর নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি কখনোই বুঝতে পারি না, আমি অন্য একজনের ফোন ভাঙলে তাতে আমার কী উপকার হবে? যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ফোনটি আমি কখনই ইচ্ছেকৃতভাবে ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছিলাম, যেভাবে নিজেকে নিরাপদ রেখে চলা যায় সেই চেষ্টাই করছিলাম। আর সেখানে যেহেতু অনেক মানুষ ছিল। অনেক ভিড় ছিল, সবাই চেষ্টা করছিল ছবি তুলতে। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, তাদের কাছে না গিয়ে কীভাবে আমার কাজগুলো সম্পন্ন করব ইমিগ্রেশনের। এ সময় একজন উৎসুক জনতা আমার গায়ের ওপর দিয়ে এসে ছবি তুলতে যায়। আমি তাকে সরিয়ে দিতে গেলে তার হাতের সাথে আমার হাত লেগে মোবাইলটি পড়ে যায়। হয়তো পরে ভেঙেও গেছে। তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয়, তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। বিশেষ করে করোনার সময় মনে হয় সবারই সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যত দিন এই করোনার প্রভাবটা থাকে।’