সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত যুবক রায়হান উদ্দিন আহমদের প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্টে বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত ২৬ নভেম্বর ওই রিপোর্টটি মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হানের মরদেহ পান স্বজনরা। ওই দিনই তাঁর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে, পিবিআই মামলার তদন্তভার গ্রহণের পর ১৫ অক্টোবর পুনরায় লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে।
রায়হান হত্যার মূল হোতা বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গত ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
এদিকে আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এঁরা হলেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র ও রায়হান হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বাতেন।
গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে এই দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের।
অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘আকবরকে পালাতে কারা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের খুঁজে বের করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ১৮ নভেম্বর এই দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’
এর আগে একই অভিযোগে বন্দর বাজার ফাঁড়ির এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জানান বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের।
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন আহমদকে (৩৩) গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে তাঁর লাশ পায় পরিবার। পরে ওই দিন রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। স্বজনদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা না পেয়ে রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ১২ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই টিটু চন্দ্র দাস, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও তৌহিদ মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যাহার করা হয় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে। এর মধ্যে এসআই আকবর, এএসআই আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এ ছাড়া নিহত রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা শেখ সাইদুর রহমানকেও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।