প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার দায়ে আট আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার আট আসামির মধ্যে ছয়জনের উপস্থিতিতে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।
৫৩ পৃষ্ঠার রায় থেকে বিচারক আংশিক পড়ে শুনান। এ সময় রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া ও মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। এ ছাড়া আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেওয়া এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করে দেওয়া।
বিচারক আরো বলেন, ব্লগার অভিজিত রায়ের বই প্রকাশ করার জন্যই জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয় এবং যারা বই প্রকাশের দায়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুস সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।
এর মধ্যে মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ পলাতক রয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় বাকি ছয় আসামি আদালতে ছিলেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সরোয়ার জাকির রায়ের পর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
আদালত চত্বরে থাকা আইনজীবীরা জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে মামলার ছয় আসামিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এর কিছু পরে মামলার রায় দিতে এজলাসে বসেন বিচারক।
এ সময় আদালতে ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ জানুয়ারি মামলায় রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৫ সালের ৩১ নভেম্বর আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ কার্যালয়ে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুর রহমান আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপরে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বদলির নির্দেশ দেন বিচারক। পরের বছর ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।