মার্কিন সিনেটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারে গতকাল বৃহস্পতিবার অভিশংসকেরা জানান, তাঁদের কাছে সুস্পষ্ট ও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে ট্রাম্পের প্ররোচনায় ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালানো হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট অভিশংসক কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি ডায়ানা ডেগেট হামলাকারীদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্পের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্রোহীরা কাজ করেছে।’
ডেগেট আরো বলেন, ‘বিদ্রোহীরা ধরেই নিয়েছিল যে, তারা ট্রাম্পের নির্দেশ পালন করছে। তারা পুলিশকে বোঝাতে চাচ্ছিল যে, ট্রাম্প তাদের সেখানে থাকতে বলেছেন।’
ডেগেট অভিশংসন বিচারে প্রমাণ হিসেবে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন সাক্ষাত্কার দেখিয়েছেন। সেখানে দেখা যায়, প্রতিবাদকারীরা বলছেন যে, তাঁরা ক্যাপিটলে গিয়েছিলেন কারণ ট্রাম্প তাঁদের তেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসক ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি টেড লিউ বলেন, ‘ওই হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের কোনো অনুশোচনা নেই।’
অধিবেশনে বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা সাংবাদিকদের জানান, ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা গত বুধবার হামলার দিনের বেশ কিছু ভিডিও দেখানোর পর তাঁরা স্তম্ভিত। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক ডজন পুলিশ কর্মকর্তা হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
তবে সিনেটে ট্রাম্পের রিপাবলিকান সমর্থকেরা তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন কি না, তার তাত্ক্ষণিক ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন। নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় শত শত সমর্থকদের বিদ্রোহ করার জন্য প্ররোচিত করেন। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত ১০০ সদস্যের সিনেটে ১৭ জন রিপাবলিকানের সমর্থন প্রয়োজন। এই মুহূর্তে, হাতেগোনা কয়েকজন প্রতিনিধি ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার পক্ষে রয়েছেন।
এর আগে মার্কিন সিনেটে অভিশংসন শুনানির দ্বিতীয় দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে সহিংসতার প্রধান উসকানিদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্পকে তাঁর উশৃঙ্খল সমর্থকদের ‘ইনসাইটার ইন চিফ’ বা ‘প্রধান উসকানিদাতা’ উল্লেখ করে অভিশংসনের পক্ষের ডেমোক্রেটিক সিনেটরেরা বলেছেন, ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় ট্রাম্প নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার শুনানির কার্যক্রম শুরুর জন্য সাংবিধানিক বৈধতার বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী ভোটাভুটি হয়।
শুনানির দ্বিতীয় দিন বুধবার ডেমোক্র্যাটরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে নানা সময়ে ট্রাম্পের বলা কথা ও টুইট বার্তা ব্যবহার করেন। এ সময় ডেমোক্রেটিক সিনেটরেরা ট্রাম্পকে ক্যাপিটলে হামলায় উসকানির প্রধান হোতা হিসেবে উল্লেখ করে তথ্য-প্রমাণ হাজির করেন। বিচারপর্বে ডেমোক্র্যাটরা যুক্তি তুলে ধরেন যে, ক্যাপিটলে হামলার দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো ‘নিরপরাধ দর্শক’ ছিলেন না, বরং কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিন বলেন, ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে ‘ফাইট লাইক হেল’ বা ‘মরণপণ ঝাঁপিয়ে পড়’ বলে উসকানি দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে এক নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা দেখেছে বিশ্ব। সেই সহিংসতার ঘটনায় সেদিন একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।
অভিশংসন বিচারে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে সিনেটরেরা আবারও ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।