ফরাসি লিগে পিএসজির যা দৌরাত্ম্য, তাতে নেইমার-এমবাপ্পেরা ছাড়া অন্য কেউ লিগ জিতলে চোখ কপালে ওঠে। এ কীভাবে সম্ভব!
যেমনটা পাঁচ বছর আগে হয়েছিল। এডিনসন কাভানি–জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচদের শক্তিশালী পিএসজিকে টপকে সেবার সবাইকে চমকে দিয়েছিল মোনাকো। তখনকার তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পে, বের্নার্দো সিলভা, ফাবিনিও, মেন্দিরা দেখিয়ে দিয়েছিলেন—সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা থাকলে পিএসজির মতো ইউরোপের যেকোনো বড় ক্লাবের সঙ্গে টেক্কা দেওয়া যায়।
পরে যদিও মোনাকোর সেই দলের প্রত্যেকেই বড় ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন কিন্তু ‘ডেভিড’ মোনাকোর কাছে ‘গোলিয়াথ’ পিএসজির পরাস্ত হওয়ার ঘটনাটা এখনো আনন্দভরে স্মরণ করেন ফুটবলপ্রেমীরা।
এবার মোনাকোর মতোই আরেকটি উদাহরণ গড়ল লিল। গোলিয়াথের ভূমিকায় যথারীতি পিএসজি। ডেভিডের জায়গায় শুধু লিল। অবশ্য বহুদিন ধরে যারা লিগ আঁর খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা বলবেন, এমন অভিজ্ঞতা লিলের প্রথম নয়।
১০ বছর আগে ঠিক একইভাবে ফরাসি লিগের চূড়ায় উঠেছিল লিল। সে হিসেবে বলা যায়, মোনাকোই বরং লিলের ওই অর্জন ছুঁয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। আর এবার লিল নিজেই সে কীর্তি গড়ে দেখাল আবার।
সেবার লিলের দলে ছিলেন ‘আনকোরা’ এডেন হ্যাজার্ড, জার্ভিনিও, ম্যাথিউ ডেবিউশি, ইয়োহান কাবায়ে, ইদ্রিসা গেয়ে, আদিল রামি, রিও মাভুবার মতো একাধিক অভিজ্ঞ কিংবা প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার। এবার তাঁদের জায়গাটা নিয়েছেন বুরাক ইলমাজ, জোনাথান ইকোনে, জোনাথান ডেভিড, হোসে ফন্ত, স্টিভেন বটম্যান, জেকি চেলিক, জোনাথান বাম্বা, বুবাকারি সুমাওরে, বেঞ্জামিন আন্দ্রে।
সেবার লিলকে নিয়ে ‘আকাশ’ ছোঁয়ার পরেই ওই দলের প্রত্যেকেই নাম লিখিয়েছিলেন চেলসি, আর্সেনাল, পিএসজি, ভ্যালেন্সিয়া, এভারটনের মতো অপেক্ষাকৃত নামকরা ক্লাবে। এবারও যে অমন কিছুই হবে, দলবদলের হাটে লিলের খেলোয়াড়দের নিয়ে টানাটানি পড়বে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু ওই যে লিলের কাছে এসব তো নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর আগে শুধু অবনমনই নয়, বরং দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল ক্লাবটিকে। তখন আর্থিক অনটন ঘোচাতে, আর্থিক সংগতি নীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দলের অনেক খেলোয়াড়কে বিক্রি করেছে লিল।
নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ভিক্তর ওসিমহেন, আইভোরিয়ান উইঙ্গার নিকোলাস পেপে, ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক গাব্রিয়েল মাগালিউয়াস, পর্তুগিজ স্ট্রাইকার রাফায়েল লিয়াও, ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার থিয়াগো মেন্দেস—সবাইকে আকাশচুম্বী দামে বিক্রি করে লিল আর্থিক অনটনের ব্যাপারটা এড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের দলের ছক আর কৌশলও ভেঙেছে বারবার।
সবাই চলে গেলেও দুজনকে ঠিকই ধরে রেখেছিল লিল। তাঁরা অবশ্য মাঠের ভেতরকার নন, বরং বাইরের দুই কুশীলব। হয়তো লিল বুঝতে পেরেছিল, এই দুজন থাকলেই চলবে, বাকিরা কেউ থাকুক বা না থাকুক!
তাঁরা হলেন ক্রিস্তফ গালতিয়ের ও লুইস কাম্পোস। প্রথমজনকে অনায়াসে বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরাসি কোচ বলা যায়। আট বছর সেঁত এতিয়েনে কাটানোর পর মার্সেলো বিয়েলসার জায়গায় লিলের ম্যানেজার হিসেবে যখন নাম লেখালেন, দল তখন ঘোরতর অমাবস্যায়।
মার্সেলো বিয়েলসার মতো হয়তো অত পরিচিত কেউ নন, কিন্তু ফরাসি লিগের সেরা ম্যানেজার হিসেবে তত দিনে দুবার পুরস্কার পাওয়া এই লোক জানতেন, সীমিত আর্থিক সামর্থ্যের মধ্য দিয়ে কীভাবে দলকে সেরা বানানো যায়।