ঢাকা: জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দমনে সারা দেশে পুলিশের ‘সাঁড়াশি অভিযানে’ এ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে। জঙ্গি বিরোধী অভিযান হলেও এদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষসহ অনেক অরাজনৈতিক লোকও এই তালিকায় রয়েছেন।
তবে জঙ্গি বিরোধী বিশেষ অভিযানে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হলেও এই বিপুলসংখ্যক লোক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত কিনা সে সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
এদিকে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে হয়রানির উদ্দেশ্যে বেছে বেছে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলটি বলছে, “এই অভিযানে মাদকসেবীদের মতো কিছু সামাজিক অপরাধীরা থাকলেও ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে ৫৪ ধারা বিষয়ক যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটিকেও উপেক্ষা করা হচ্ছে। এটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আদালতের প্রতি অবমাননা ও চরম ধৃষ্টতার সামিল।”
বিএনপির অভিযোগ, জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে ব্যাপকহারে গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বখশিশ হিসেবে সরকার গ্রেপ্তার বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে বিএনপি।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “দিনে দুপুরে মানুষের চোখের সামনে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও খুনীদের ধরতে না পারায় জনমনে নানাবিধ প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। অপরদিকে বর্তমানে জঙ্গি দমনের নামে দেশব্যাপী যে গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলছে তাতে পুরো ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রহস্যজনক বলে জনগণ মনে করে। জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, এর অন্তরালে সরকারের বড় ধরনের কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।”
তিনি বলেছেন, “বিনা বিচারে তদন্ত ছাড়াই মানুষকে গ্রেপ্তার করে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে। তারা যদি জঙ্গি হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মূল হোতাদের খুঁজে বের না করে কথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা রহস্যজনক। জঙ্গিদের সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদেরকে ধরা এবং তাদের গোপন আস্তানা খুঁজে বের করার কোন সদিচ্ছা আছে কী না এ নিয়ে জনমানসে দীর্ঘতর প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।”
শনিবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জঙ্গি বিরোধী বিশেষ অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩১৯২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদেরমধ্যে ৩৭ জন জঙ্গি সদস্য রয়েছে।
পুলিশের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩১৫৫ জন নিয়মিত মামলা এবং অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার মামলার আসামি রয়েছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষসহ অনেক অরাজনৈতিক লোকও রয়েছেন গ্রেপ্তারকৃতদের তালিকায়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে অন্তত দেড় সহস্রাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদেরমধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মী। কিছু কিছু জেলায় ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে সাধারণ ছাত্রদেরও আটক করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ২৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া যশোরো ১০১, রংপুরে ১১৭, কুমিল্লায় ১০১, রাজশাহীতে ২৬২, খুলনায় ৯২, ঝিনাইদহে ৪৮, নোয়াখালীতে ৬৫, দিনাজপুরে ৬৫, টাঙ্গাইলে ৬৫, সাতক্ষীরায় ৩৫ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তারের খবর এসেছে।
ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিবির সন্দেহে ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
দেশের বিভিন্ন জেলায় সন্দেহভাজন উগ্রপন্থীদের হাতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড এবং বিশেষ করে ৫ জুন চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম খুনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই অভিযান চলবে এক সপ্তাহ।
সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করা হচ্ছে। বেশির ভাগ খুনের ঘটনায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নামে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।