ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
মুক্তিপণের জন্য মালয়েশিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করা সেই তুহিন
রেজা দেশে ফিরেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নিজ খরচে মালয়েশিয়ায় থেকে
ঝিনাইদহে আসেন তিনি। ঝিনাইদহে এসে বুধবার দুপুরে তুহিন সদর
হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ সব তথ্য জানান তুহিন রেজার মা রোকেয়া খাতুন। তিনি জানিয়েছেন
মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছেলে তুহিন রেজার দুই পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সে
এখন হাটতেও পারছে না।
দালালরা বলেছিলো মালয়েশিয়া থেকে আনা ও চিকিৎসার সব খরচ তারা বহন
করবে। কিন্তু তারা উঁকি মেরেও দেখছেনা।
ঘটনার সাথে জড়িত আলোচিত দালাল মাহফুজুর রহমান বল্টুকে পুলিশ গত
২১ আগষ্ট আটক করে। তারপর দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় দালাল বল্টুকে
ছেড়ে দেওয়া হয়।
মধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েলের মধ্যস্থতায় দুই সপ্তার মধ্যে
তুহিন রেজাকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও বিদেশে যাওয়ার খরচ দেওয়ার সমঝোতা
হয়। কিন্তুু দালালরা এখন কোন খোঁজ খবরও নিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে লিবিয়া যাওয়ার জন্য এলাকার দালাল মহামায়া গ্রামের
মধু, আসাদ, বেজিমারা গ্রামের মাহফুজুর রহমান ওরফে পল্টু ও তোরাব আলির
কাছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করে তুহিন।
দুই বছর ধরে ঘোরানোর পর দালালরা জানান, লিবিয়ার আবস্থা ভাল নয়। সাড়ে ৪
লাখ টাকা হলে ইরাক বা কাতারে পাঠানো হবে। এরপর ফ্লাইটের নামে
তুহিনকে দফায় দফায় ১৬ বার ঢাকায় নিয়ে রাখা হয়।
সর্বশেষ একই খরচে তুহিনকে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই মালয়েশিয়ায়
পাঠিয়ে দেয়। মালয়েশিয়ায় পৌছানোর পর দালালচক্র তুহিনকে আটকিয়ে
পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না
পেয়ে তুহিনকে দফায় দফায় নির্যাতন করে।
কোন উপায়ন্ত না পেয়ে তুহিনের দরিদ্র বাবা গরু ও মাঠের জমি বিক্রি করে
দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
এরপর তুহিনের নিকট আরো দশ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না
পারাই তিন তলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।
এতে তুহিনের দুই পা ভেঙ্গে যায়। দেশে ফিরে পঙ্গু তুহিন জানান, তার উপর
যে নির্যাতন করেছে তাদের বিচার চান তিনি। তুহিন আরো বলেন, এখন
যদি দালালরা আমার সুস্থতার ব্যাবস্থা না করে তাহলে আমি ঝিনাইদহ সদর
হাসপাতাল থেকে ফিরে দালালদের নামে মামলা করব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তুহিন তার আদরের ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে তার
উপর যে নিষ্ঠুর নির্যাতন হয়েছে সে সম্পর্কে কেঁদে কেঁদে
সাংবাদিকের কছে বিষদভাবে বর্ননা করেন।