রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ পাঁচ মেয়েশিশু উদ্ধার হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও মিরপুর থানা পুলিশের যৌথ টিম উদ্ধার করে তাদের।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এ এস এম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ঢাকার সদরঘাট, গাজীপুর ও নেত্রকোনা থেকে নিখোঁজ পাঁচ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি ও থানা পুলিশ জানতে পেরেছে, তাদের মধ্যে দুজন পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে পথে কোনো একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে। তাদের সদরঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত রবিবার মিরপুরের জনতা হাউজিং এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু নেত্রকোনা থেকে উদ্ধার হয়। তারা তাদের ঘনিষ্ঠ দুই তরুণের সঙ্গে দেখা করতে মিরপুর থেকে নেত্রকোনায় গিয়েছিল। তাদের উদ্ধারের সময় রাব্বি ও সাগর নামের দুই তরুণকে আটক করা হয়েছে। এদের সঙ্গে দেখা করতেই তারা ঘর ছেড়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানিয়েছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার উপকণ্ঠ গাজীপুর থেকে আরেক কন্যাশিশুকে উদ্ধার করেছে রূপনগর থানা পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপনগর থানার এসআই মাসুদুর রহমান বলেন, উদ্ধার হওয়া মেয়েটি রূপনগরের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে সে ঘর ছেড়েছিল। তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সদরঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার মানস কুমার গতকাল বিকেলে বলেন, উদ্ধারের পর শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। প্রাথমিকভাবে শিশুরা জানিয়েছে, মা-বাবার বকাঝকার কারণে তারা অভিমান করে একসঙ্গে বাসা থেকে বের হয়। এরপর তারা পথে কোনো একটি খারাপ চক্রের খপ্পরে পড়ে। পরে কৌশলে চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়। এরপর তারা নিজেরাই সদরঘাটে যায় বরিশালের উদ্দেশে। তাদের মধ্যে একটি শিশুর নানার বাড়ি বরিশালে। লঞ্চে করে সেখানেই যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা ছিল তাদের।
গতকাল সন্ধ্যায় দুই শিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ডিবি কর্মকর্তা এসআই কামাল পাশা তাদের ওসিসিতে নিয়ে যান। কেন তাদের ওসিসিতে নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ওসিসির সমন্বয়ক ডা. বিলকিস বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই শিশুদের শারীরিক কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দূর করতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে।’
এদিকে পল্লবী এলাকা থেকে নিখোঁজ তিন কলেজছাত্রীকে গত ছয় দিনেও পাওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে তিন কলেজছাত্রী নিখোঁজ হয়। তারা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে বলে জানায় পরিবার।
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, তাদের সঠিক অবস্থান এখনো জানা যায়নি। তবে অভিযান চলছে।
পুলিশ ও নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের স্বজনদের সন্দেহ, তারা কোনো মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছে। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামির মধ্যে মো. রকিবুুল্লাহর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্য তিন আসামির বয়স নির্ধারণের পর রিমান্ড শুনানি হবে।
তিন কলেজছাত্রীর বিষয়ে র্যাব-৪-এর পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তাদের খোঁজ পেতে কাজ চলছে।’