ঝালকাঠি সংবাদদাতাঃ- পৌর ভূমি অফিসে চাকুরীরত মামার মৃত্যুর পর
তার ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের
সহসাধারন সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকণ্ঠ-এনটিভির প্রতিনিধি কেএম
সবুজের বিরুদ্ধে বিধবা মামী তানিয়া বেগম বাদি হয়ে মামলা দায়ের
করেছে। ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক
জাহেদ আহম্মেদের নির্দেশের প্রায় ১৫দিন পর নলছিটি থানার ওসি
দন্ডবিধির ৪০৩/৪০৬/৪২০/৫০৬(২) ধারায় (এমপি-৯৩ মামলায়) মামলাটি
এজাহার হিসেবে (নং- ১৮তাং ৩০.০৮.২০১৬) রেকর্ড করেন। এছাড়াও
অসহায় মামী তানিয়া বেগম বাদী হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
আদালতে ৯৮ ধারায় দায়েরকৃত অপর মামলায় (এমপি-৪৩৯) আসামী কেএম
সবুজের বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি সহ তার কাছে থাকা চেকটি
উদ্ধারের জন্য নলছিটি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার এজাহার সুত্র জানায়, স্বামী কুদ্দুছ হাওলাদার নলছিটি পৌর ভূমি
অফিসে চাকুরীরত থাকাকালীন ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই হঠাৎ তিনি মারা
যান। তার মৃত্যুর পর ১মাস বয়সী কন্যা আয়েশাকে নিয়ে তানিয়া বেগম
চরম অনিশ্চয়তায় দিন যাপন করতে থাকে। পরে বাদিনীর সহায়তার মুখোশ ধরে
মৃত কুদ্দুছ হাওলাদারের আপন ভাগ্নে মালিপুর এলাকার তরকারী বিক্রেতা
আমজেদ আলীর পুত্র সাংবাদিক কেএম সবুজ এগিয়ে আসে।
তিনি সরল বিশ্বাসে ভাগ্নে সবুজকে নিয়ে অফিস থেকে স্বামীর
পাওনা বাবদ ১২লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা উত্তোলন করে ও নলছিটি সোনালী ব্যাংক
শাখায় তানিয়া বেগমের নামে একটি হিসাব খুলে তাতে জমা রাখেন।
সবুজ উক্ত টাকা আত্মসাতের লোভে কৌশলে এতিম শিশুকন্যা আয়শার নামে
ফিক্সড ডিপোজিট ও তানিয়া বেগমের নামে মাসিক পেনশন স্কীম করে
দেয়ার কথা বলে একাউন্টের ৪টি চেকের পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নিজের হাতে
নেয়।
পরবর্তীতে অসহায় মামী তানিয়া বেগমকে না জানিয়ে তার একাইন্ট
থেকে উক্ত চেকের মাধ্যমে কেএম সবুজ জমাকৃত ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা
উত্তোলন করে বিষয়টি মামীর কাছে গোপন করে। তবে সে মামীর নামে
ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ১ লক্ষ টাকার একটি জীবন বীমা
পলিসি ও শিশুকন্যা আয়শার নামে পূবালী ব্যাংক নলছিটি শাখায় ২ লক্ষ
টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট করে নিজেই নমিনি অন্তর্ভূক্ত থাকেন।
এঅবস্থায় পারিবারিক প্রয়োজনে মামী তানিয়া বেগম র্দূরন্ধর ভাগ্নে
কেএম সবুজের স্মরনাপন্ন হলে ও স্বাক্ষরিত চেক ফেরত চাইলে সে নানারকম
টালবাহানা করে। উল্টো গচ্ছিত একটি চেকের পাতায় নিজেই ৫লাখ টাকা
লিখে ধার হিসাবে দিয়েছে বলে নাটক সাজায়। এমন কি উক্ত চেক দিয়ে
৫লাখ টাকা নেয়ার দাবী তুলে ঝালকাঠি পেসক্লাবের এক এডভোকেট
সাংবাদিককে দিয়ে একটি উকিল নোটিশ প্রেরন করেন।
নিরুপায় হয়ে বিধবা মামী তানিয়া বেগম ঝালকাঠি সিনিয়র
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (এমপি-৯৩) মামলা দায়ের করে। আদালত
নলছিটি থানার ওসিকে সরাসরি অভিযোগটি এজাহার হিসেবে
রেকর্ডের ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত অপর মামলায়
(এমপি-৪৩৯) ওসিকে ওয়ারেন্ট জারি করে চেকটি উদ্ধারের নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে হতভাগ্য তানিয়া বেগম জানায়, আপন ভাগ্নে হয়েও
আমাদের সাথে এতো বড় বিশ্বাস ঘাতক করলেও দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও এনটিভির
ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি হওয়ার কারনে কেএম সবুজের অপকর্মের
বিরুদ্ধে কারো কাছে গিয়ে কোন ন্যায় বিচার পাইনি। নলছিটি পৌর
মেয়র তছলিম উদ্দিন চৌধুরী ও থানায় ওসি সুলতান মাহমুদের কাছে
আবেদন করলে কোন প্রতিকার পাননি। এছাড়া ঝালকাঠী জেলা প্রশাসক
মিজানুল হক চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি নলছিটি
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলে সেটিও
তদন্তাধীন থাকায় বাধ্য হয়ে আদালতের আশায় নিয়েছি।
এ ব্যাপারে নলছিটি থানার ওসি সুলতান মাহমুদ জানায়, ঝালকাঠি
দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও এনটিভির জেলা প্রতিনিধি কেএম সবুজের বিরুদ্ধে
তার মামী তানিয়া বেগমের অভিযোগ অনুযায়ী প্রতারনা, জালিয়াতী ও
আত্মসাতের অভিযোগে ৩০ আগষ্ট এজাহার (নং-১৮) রেকর্ড করা হয়েছে।
মামলার একমাত্র আসামী সবুজ পালাতক থাকায় তাকে আটক করা সম্ভব
নাহলেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।#