সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের (৯২) প্রাণবন্ত সঙ্গীত ছিল উপমহাদেশের মানুষের জন্য আনন্দের এক অফুরান উৎস। নতুন প্রজন্মের গায়ক ও সঙ্গীতজ্ঞদের অনুপ্রাণিত করেছে লতার সঙ্গীত। টানা প্রায় চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল রবিবার সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিংবদন্তি লতাকে স্মরণ করলেন বলিউডের গায়ক ও সুরকার শঙ্কর মহাদেবন।
দিল্লির সাংবাদিক সুধা জি তিলককে শঙ্কর মহাদেবন বলেছেন, লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গীত ভারতীয়দের আবেগের সমগ্র বর্ণালীকে আচ্ছন্ন করেছিল। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সুরেলা কণ্ঠের সুরে ভারতের উত্তোরণ। তিনি ভারতে সুরের রানি হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। তার গাওয়া হাজারও গানের সঙ্গে আমাদের জীবনের বিভিন্ন আবেগকে মেলাতে পারি। বহু বছর ধরে তার কণ্ঠ আমাদের জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, লতা মঙ্গেশকরের গান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মানুষকে উজ্জীবিত করেছে এবং যুদ্ধ ও হানাহানিতে বিধ্বস্ত দেশকে শান্তও করেছে তার কণ্ঠ। লতা যখন ‘অ্যায় মেরে ওয়াতান কি লোগো’ (ও আমার দেশের মানুষ) গান গেয়েছেন, তখন কেবল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু একা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন না; সৈন্যরা এবং পুরো জাতি তার সঙ্গীতে সমানভাবে সুরেলা ‘সুগন্ধী’ খুঁজে পেয়েছিল। বলিউডের চলচ্চিত্রের নায়িকাদের লিপে গাওয়া তার উদ্দীপক প্লেব্যাক গান লাখ লাখ মানুষের হৃদয় আলোড়িত করেছে। আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঙ্গীতের ছন্দে বর্ণনা করার জন্য অনেকগুলো চলচ্চিত্র থেকে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গান রয়েছে।
শঙ্কর মহাদেবন আরও বলেছেন, ভারতের অনেক সঙ্গীতবিদ খতিয়ে দেখেছেন- লতার বিশেষ গানগুলো ছিল ‘দুঃখের চিন্তার মধুরতম গান’; কিন্তু তিনি সমানভাবে উদযাপন, অনুপ্রেরণামূলক এবং বর্তমানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক গান গেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, লতা দিদি বা বড় বোন, অনেক ভারতীয় তাঁকে সম্বোধন করতেন আপন ভেবে। তাঁর সঙ্গীত এবং নিছক উপস্থিতি আমাদের আধ্যাত্মিক সংযোগ করে দিয়েছিল। তিনি অবশ্যই আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। ২০১৩ সালে আমি যখন আমার ভক্তিমূলক অ্যালবাম ‘হর হর মহাদেব’-এর জন্য তাঁর সাঙ্গীতিক সহযোগিতা পেয়েছিলাম, তখন আমি রোমাঞ্চিত এবং সম্মানিত হয়েছিলাম। তিনি তখন ৮০ বছর পার করছিলেন আর এটি তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল। আমরা দুজনেই অ্যালবামটির জন্য গান করার সময় আমাদের একই রকম আধ্যাত্মিক অনুভূতি খুঁজে পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ১১ বছর বয়সে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় বীণা বাজানোর মধ্য দিয়ে। সুরকার শ্রীনিবাস তখন একজন বীণা বাদক খুঁজছিলেন। হুট করেই সেখানে আমার নাম ওঠে। লতা এবং পণ্ডিত ভীমসেন যোশী একসঙ্গে একটি অ্যালবামে গাইছিলেন। সেই অ্যালবামেই আমার বীণা বাজানোর সুযোগ আসে।
শঙ্কর বলেন, আমার ক্যারিয়ার লতার আর্শীবাদ থেকেই শুরু হয়েছে। তাঁর গান কোনো দিনই শেষ হবে না। তাঁর কথাবার্তায়, অভিব্যক্তি দেখে কোনো দিনই মনে হয়নি যে- তিনি লতা মঙ্গেশকর। তাঁর সঙ্গে পরে অনেক অনুষ্ঠান করার সুযোগ হয়েছে। আমার মনে হয়, তিনি ভারতের কোহিনূর (অমূল্য হীরা)।