করোনাকালে ক্যাম্পাস খোলার পর গত পাঁচ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হলে ১০টি পৃথক ঘটনায় মোট ১৮ জন শিক্ষার্থী শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৷ নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনায় সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘স্টুডেন্টস এগেইনস্ট টর্চার (স্যাট) নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন এই তথ্য প্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১০ ঘটনার মধ্যে হল প্রশাসন মাত্র ৩০ শতাংশ ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাকি ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে নির্বিকার থাকতে দেখা গেছে। আর যে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে তাও নামকাওয়াস্তে। কারণ প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হল থেকে বহিষ্কার করলেও তাদের বহাল তবিয়তে হলেই থাকতে দেখা যাচ্ছে।
ছয়টি আবাসিক হলের মধ্যে স্যার এফ রহমান হলে ৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৩ জন, মাস্টার দা সূর্যসেন হলে ৩ জন, বিজয় ৭১ হলে তিন জন, জগন্নাথ ও রোকেয়া হলে ১ জন করে শিক্ষার্থী ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের কারণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে না যাওয়া, ম্যানার শেখানো, গেস্টরুম রুলস ভঙ্গ করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেস্টরুমকে নিয়ে দেওয়া ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাসের কথা বলা হয়েছে।
স্যাট এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসাবে দেখি ৷ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা যেকোনো নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা সহিংসতার শিকার হবে না, তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।
১৫ জন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তিনজন সাংবাদিকও পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্যাম্পাসের ভিতরে মারপিটের শিকার হন৷ এ ছাড়া আরো দুজন ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ ও রুবেল রশিদ সংবাদ সংগ্রহে এসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হয়েছেন। প্রশাসনিকভাবে এসব ঘটনায় কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে না হলেও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন স্যাট এর সহ প্রতিষ্ঠাতা স্মৃতি আফরোজ সুমি। ক্লাস প্রেজেন্টেশনে হিজাব ব্যবহারে শিক্ষকদের কটূ কথা, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উপদ্রব এবং গণপরিবহনে হেনস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সব সময় মানসিক ট্রমার মধ্যে রাখে বলে সুমি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্যাট এর সহ প্রতিষ্ঠাতা আহনাফ সাইদ খান, সহপ্রতিষ্ঠাতা আনাস ইবনে মনিন এবং সাদ আরমান নাফিস।