ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাতে হানে সোমবার রাতে। আগের রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভোলা জেলার অধিকাংশ গ্রাম। সোমবার দুপুর থেকে অন্ধকারে পুরো জেলা। রাতের ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়েছে হাজারো গাছ।
যাতে ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ তার ও খুঁটির। সে কারণে তিন দিনেও ভোলার অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত লাইনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মেরামতকাজ শেষ করেছে। এক দিনের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ভোলা জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে গাছ পড়ে পল্লী বিদ্যুতের ৭৬টি খুঁটি ভেঙে গেছে। ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, ৪২৮ জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। এ ছাড়াও ৩৩৭টি মিটার ও ৬৬টি ইনসুলেটর ভেঙেছে। এতে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৫২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভোলা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় দুই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। ৭০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও দুই ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে। তিনটি উপজেলায় ওজোপাডিকোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার।
বুধবার ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা, ইলিশা, রাজাপুর, ধনিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে রয়েছে। আবার অনেক জায়গায় তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎকর্মীদের লাইন মেরামত করতে দেখা গেছে।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা জানায়, ওই এলাকায় গত রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। সোমবার দিবাগত রাতের ঝড়ে ওই এলাকায় দুটি খুঁটি ভেঙে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বুধবার পর্যন্ত ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটিগুলো এখনো সংস্কার করা হয়নি।
তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের জানান, ওই উপজেলায় গত রবিবার রাত থেকে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। বিদ্যুতের কারণে মোবাইলে চার্জ না থাকায় অধিকাংশ পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
লালমোহন উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান পিন্টু জানান, মঙ্গলবার রাতে লালমোহন পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন চালু হলেও গ্রামের কিছু কিছু জায়গায় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যুৎ চালু করা হয়। তবে এখনো অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হয়নি।
ওজোপাডিকো বোরহানউদ্দিন উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ওজোপাডিকোর আওতায় বোরহানউদ্দিনে ১৪ হাজার ৩০০ গ্রাহক রয়েছে। এ উপজেলার ৬৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের প্রায় ২৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ মেরামতকাজ শেষ হয়েছে। পুরোপুরি ঠিক হতে আরো এক দিন সময় লাগবে।
ভোলা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালীদুল ইসলাম খান বলেন, ভোলায় ওজোপাডিকোর ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করতে কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। আগামী এক দিনের মধ্যে সকল লাইন চালু করা সম্ভব হবে।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাপ হোসেন বলেন, ভোলায় পল্লী বিদ্যুতের চার লাখ ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ভোলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৫২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করে প্রায় সকল উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে। তবে গ্রাম পর্যায়ে কিছু কিছু জায়গায় এখনো মেরামতকাজ চলমান রয়েছে।