মানুষের মহামূল্যবান জীবন ও দেহ সুরক্ষায় রক্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশকীয় উপাদান। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে শতকরা ৮ ভাগ (৫-৬ লিটার) রক্ত থাকে যা আমাদের দেহের জ্বালানী স্বরূপ। কৃত্রিমভাবে শরীরে রক্ত উৎপাদনের আপাতত কোন পন্থা নেই, তবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৪ কোটি ১০ লক্ষ ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়, এর ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে। ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত যে কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে স্বেচ্ছায় রক্তদানের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ‘২ নভেম্বর’ জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হলেও এর মাত্র ২৫% আসে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের মাঝ থেকে। ৫০% রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে এবং বাকি ২৫% পেশাজীবি রক্তদাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়। গাজীপুরে ও এ দিনটি ভিন্ন ভাবে পালিত হয় স্বেচ্ছায় রক্ত দানের মাধ্যমে। “ব্লাড ফাইটার্স গ্রুপ বিডি-bfgbd” সংগঠনের তত্বাবধানে স্বেচ্ছায় রক্ত দান কর্মসূচি পালন করা হয়। উক্ত কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেন সংগঠনের সহপরিচালক ‘তুলন মন্ডল’, সদস্য হৃদয় ইসলাম, গোলাম রাব্বি, শেখ ফরিদ ও রুমন রুমি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাবু দে (ব্লাড ফাইটার্স গ্রুপ বিডি-bfgbd), মহিউদ্দিন মুন্সি (বোর্ডবাজার ব্লাড ফাউন্ডেশন), এম এইচ শাকিল (আমরা রক্তযোদ্ধা)।। ব্লাড ফাইটার্স গ্রুপ বিডি-bfgbd সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক “তাজুল ইসলাম স্বপন” বলেন- স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে মানুষ বিনামূল্যে জানতে পারে নিজের শরীরে হেপাটাইটিসি-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভির (এইডস) মতো জটিল কোন রোগ রয়েছে কিনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রক্তদানের মাধ্যমে একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচানোর মতো কাজে শরিক হতে পেরে নিজের মানসিক তৃপ্তি মেলে। বর্তমানে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আমাদের রক্তদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিমতলীর দুর্ঘটনা, সাভার রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির সময়ও আমরা দেখেছি মানুষ লাইন ধরে রক্তদান করছে। এতে রক্ষা পেয়েছে অসংখ্য মানুষের জীবন। আমাদের আরো সচেতনতা প্রয়োজন, এজন্য দরকার ব্যাপক মোটিভেশন। এই মোটিভেশনের কাজটি করার দায়িত্ব আপনার, আমার, সবার। কেননা আপনার, আমার একটু সদিচ্ছায় বেঁচে যেতে পারে একটি প্রাণ, একটি পরিবার, একটি আশা, একটি স্বপ্ন।।