এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০-৩৮০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগি ২৭০ টাকা। ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০-৩৮০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগি ২৭০ টাকা। ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
মানুষের কাছে দেশি মুরগির বিকল্প হিসেবে সোনালি মুরগি বেশ জনপ্রিয়। রেকর্ড দাম বাড়ার কারণে এই মুরগিও এখন সাধারণের সাধ্যের বাইরে। বাজারে সাধারণের সাধ্যের প্রোটিন বলে পরিচিত ব্রয়লার মুরগি এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ায় ফুটপাতের হোটেল ও রিকশার গ্যারেজের খাদ্যতালিকা থেকে এটি বাদ পড়েছে।
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এ সময় রোজাদার মানুষ কিছুটা ভালোমন্দ খাবার খেতে চায়। কিন্তু মুরগি ও মাংসের দাম চড়ে যাওয়ায় এখন মধ্যবিত্তও শঙ্কিত।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির দাম আরেক দফা বেড়েছে। আজ (গতকাল) আমরা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছি ২৭০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৭০-৩৮০ টাকা।’ আপাতত মুরগির দাম কমার কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘পোলট্রি খাদ্য, মুরগির বাচ্চা, ওষুধসহ সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। এসব কারণে খামারিরা শেডে মুরগির বাচ্চা তুলছেন না। খামারিদের আশঙ্কা, যে টাকা তাঁরা খামারে মুরগির পেছনে দেবেন, সে টাকা বাজার পড়তির দিকে থাকলে আর উঠে আসবে না। যে কারণে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়ে মুরগির দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, পোলট্রি খাদ্য, বাচ্চা, ওষুধসহ সব কিছুর দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে খরচ বেড়ে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৭ টাকা, যেখানে খামারিরা বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়। ঢাকার বাজারে এই মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এই দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নেই।
গতকাল জোয়ারসাহারা বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জুবায়েদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশি মুরগির বিকল্প হিসেবে সোনালি মুরগি আমার খুব পছন্দ। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি খাওয়া শুরু করি। কিন্তু এখন ব্রয়লার মুরগিও নাগালের বাইরে চলে গেছে।’
আকবরদের হোটেলে মাংস বাদ : ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোডের পাশে ফুটপাতে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া পাশাপাশি দুটি উন্মুক্ত খাবারের হোটেল। একটি দোকানের মালিক বরিশালের আকবর। অন্যটি রাসেল নামে এক ব্যক্তির।
গতকাল দুপুরে আকবরের হোটেলে ১৫-২০ জন লোক ভাত খাচ্ছিল। আকবর জানান, নিম্ন আয়ের চাকরিজীবী, গাড়ি ও রিকশার চালকরাই মূলত তাঁর দোকানের খদ্দের। পার্সেলেও বিভিন্ন অফিসে খাবার পাঠানো হয়। ভাতের সঙ্গে তরকারি রয়েছে কম দামি বিভিন্ন ধরনের চাষের মাছ। আগে বয়লার মুরগিও থাকত। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় এক মাস ধরে সেই মাংসও বাদ।
রাসেলের হোটেল থেকে জানা গেল, গত তিন দিন এ হোটেলে ব্রয়লার মুরগি বাদ দেওয়া হয়েছে। চলছে ছোট সাইজের পাবদা ও পোয়া মাছ। প্রতি পিস মাছের দাম ৪০ টাকা। আছে ডিম ও সবজি। দাম আকবরের হোটেলের মতো। এ হোটেলে এক খদ্দের বললেন, মাংস আর না খাওয়াই ভালো। মাংসের টুকরা ছোট হতে হতে এত ছোট হয়ে গেছে, ওতে এখন এক প্লেট ভাত খাওয়া যায় না।
মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি জানিয়েছেন, মুরগির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘রোজার সময় মুরগির দাম আর বাড়বে না। রমজানে পোলট্র্রি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সজাগ থাকবে। তবে বাজারে এরই মধ্যে দাম অনেক বেড়েই আছে। এই অস্বাভাবিক দাম রাতারাতি কমে আসবে না। মুরগির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সম্প্রতি বলেন, রমজানে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের দাম কোনোভাবেই বাড়বে না। তিনি বলেন, ‘রমজানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস বিক্রি করা হবে। এসব বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বাজারে মাছ-মাংসের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। রমজানে জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারীদের সহায়তা নিয়ে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বাজারে এসব খাদ্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’