ঢাকার শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় প্রতিবন্ধী সন্তানকে হাসপাতালে নেওয়ার সহায়তা চেয়ে এক যুবককে বাসায় ডেকে নিয়ে মুক্তিপন আদায়ের অভিযোগে ফিটিং (প্রতারক) চক্রের এক নারী সদস্যসহ ৪জনকে আটক করেছে আশুলিয়া পুলিশ। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে অপহৃত ভুক্তভোগীকেও উদ্ধার করে পুলিশ।
শুক্রবার (৫ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচট এলাকার রিপন ভূঁইয়ার মালীকানাধীন ফ্ল্যাটবাসা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলো- যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার ঠাকুরকাঠি এলাকার মোঃ জালাল বিশ্বাস ছেলে মোঃ তরিকুল ইসলাম তারেক (৩৬), চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার চাদলা গ্রামের মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে মোঃ আঃ কাদের (৩৩), বরিশাল জেলার মুলাদী থানার বাহেরচর এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ শাহআলম (৩৮) ও ভোলা জেলার মনপুরা থানার চরযতিন এলাকার কামাল উদ্দিনের মেয়ে শারমিন নাহার (৩০)। তারা সবাই আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী সুমন রেজা (২৭) ঢাকা জেলার ধামরাই থানার দক্ষিণপাড়া থানা রোড এলাকার মোঃ মান্নানের ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকলে ৫টার দিকে সুমন রেজা নামের এক যুবক উত্তর গাজীরচট থেকে পায়ে হেটে ইউনিক বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার সময় শারমিন নাহার নামের এক নারী তার নিকট গিয়ে জানায়, তার প্রতিবন্ধী একটি সন্তান আছে। সে খুব অসুস্থ্য, তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। পরে সুমন সরল বিশ্বাসে শারমিনের বাসায় যায়। বাসায় প্রবেশ করার সাথে সাথে আরও তিনজন রুমে ঢুকে সুমনকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। শারমিন নাহারের সাথে সুমনের অবৈধ সম্পর্ক আছে বলিয়া রুমের ভিতর আটক রাখিয়া এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভন্ন স্থানে জখম করে। পরে তারা তার নিকট ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপন হিসাবে দাবী করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা সুমনকে উলঙ্গ করে মোবাইল ফোনে নগ্ন ভিডিও ধারন এবং টাকা না দিলে ছবি/ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এ সময় তারা তাকে খুন করিয়া লাশ গুম করার হুমকি প্রদর্শণ করে।
এ সময় সুমনের নিকটে থাকা ২ হাজার ৭৫০ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এ সময় তারা সুমনকে টাকা আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। পরে টাকা আনার কথা বলে বিষয়টি তার বন্ধুদের জানালে তার বন্ধুরা বিষয়টি থানায় অবহিত করে। পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে সুমনকে উদ্ধার করে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত এক নারীসহ ৪জনকে আটক করে।
ভুক্তভোগী সুমন রেজার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আটককৃতদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম তারেক, আঃ কাদের ও শাহআলম নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সুমনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে এবং তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান বলেন, তারা ৪ জনই মূলত একটি চক্র। মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করাই তাদের উদ্দেশ্য। গ্রেফতার শারমিন নাহার সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে কৌশলে রুমে নিয়ে যায়। এরপরে সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন যুবক হাজির হয়ে ব্লাকমেইল করে ও নগ্ন ভিডিও ধারণ করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা মুলত কথিত সাংবাদিক। পরিচয়ে আড়াঁলে তারা এসব অপকর্ম করে আসছিল। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা যার নং ১২, তারিখ (০৫/০৫/২০২৩ ইং ধারা : ৩৪২/৩২৩ / ৩৮৫ / ৩৮৬/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড।
উক্ত মামলায় আজ দুপুরে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।