শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কবে হবে জাতীয় নির্বাচন, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ মোরেলগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার উদ্বোধন জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কখন, যা বললেন মির্জা ফখরুল গুম-খুনে আর জড়াবে না র‍্যাব : মহাপরিচালক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম সমর্থন করে না ভারতের মোদি সরকার সোনারগাঁয়ে দুটি চুনা কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন পাঁচবিবিতে জনবল সংকট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ক্যারিবিয়ান জয়ের পর তাসকিন-তাইজুল যা বললেন

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আগের অবস্থানেই দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে
দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোগো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েক মাস। তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনো দুই বিপরীত মেরুতে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বর্তমান সংবিধানের বাইরে ভিন্ন কোনো চিন্তা করছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দলটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে অনেকেই দুদলের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা দেখলেও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই; বরং দুদলেরই অনড় অবস্থানের কারণে সেই কাঙ্ক্ষিত সংলাপের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। যদিও উভয় দলকে আলোচনার টেবিলে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের তৎকালীন সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এক টেবিলে আলোচনার মধ্যস্থতা করেন। তবে বাংলাদেশ ত্যাগের আগে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন যে, ‘উভয়পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।’ কিন্তু তারানকোর কথায় পরিষ্কার আভাস মিলেছিল যে, আলোচনায় তেমন কোনো সমাধান বের হয়নি। অনেকেই বলেন, ওই আলোচনায় আওয়ামী লীগ কথা দিয়েছিল যে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কিছুদিন পরই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়া হবে; কিন্তু সে রকম কিছুই আর বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।

অবশ্য এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, সংবিধানের অলিগলি ঘেঁটে যদি কোনো পথ বের করা যায় সে পথে নির্বাচন হতে পারে। তবে নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে আলোচনার উদ্যোগ নিলেই কেবল আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। তারা এর বাইরে অন্য কোনো ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বসতে রাজি নয়। এ অবস্থায় সরকারের দিক থেকেও কোনো সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু কালবেলাকে বলেন, যারা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে নির্বাচনকে বানচাল ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য ভিসা নীতি সহায়ক হতে পারে। এখানে যদি অন্য কোনো দেশের সন্দেহ থাকে, তাহলে তারা বসে এটা ঠিক করতে পারে যে, সংবিধানের ভেতরে কোথাও কোনো ফাঁকফোকর আছে কি না, সেটা তারা বিবেচনা করুক। সেগুলো দেখুক, আলোচনা করুক। কিন্তু সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হতে হবে, দেশে এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। সংবিধানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বা অন্য কোনো উপায়ে আঘাত আসুক, এটা আমরা চাই না।

যুক্তরাষ্ট্রে বৈরী আবহাওয়ার মাঝে আন্দোলনরত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের অনুষ্ঠানস্থলে এসে তাদের দাবি উপস্থাপন করার আহ্বানে অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু গত মার্চ মাসের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘সংলাপ কার সঙ্গে করব? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি। তার ফল কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ মনোনয়ন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরে গেছে, তারপর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

জানা গেছে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সংলাপে বসেন। সে সময় বিএনপি নির্বাচনের বিষয়ে কিছু দাবি-দাওয়া পেশ করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের দিন মাঝপথে নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ কালবেলাকে বলেন, সংলাপের বিষয়ে এখনো দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তা ছাড়া সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো সংলাপের সম্ভাবনাও নেই।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সংলাপে না বিএনপির

এদিকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু ছাড়া কোনো ধরনের সংলাপে যাবে না মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার ১০ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনরত দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে—কথা বললে সে বিষয়ে কথা হবে। অন্য কোনো বিষয়ে নয়। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোভাবেই অংশ নেবে না বিএনপি, এমনই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই গত ২৩ মার্চ বিএনপিকে আবারও সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর সে সময়ও রাজনীতির টেবিলে নতুন করে আলোচনা আসে ‘সংলাপ’ ইস্যুটি। তবে ইসির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক কোনো সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এমনকি সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ইসির দেওয়া চিঠির জবাবও দেয়নি দলটি।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, চিঠির ভাষায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, নির্বাচন কমিশনের ওই আমন্ত্রণ ছিল সরকারের কূটকৌশলেরই অংশ। সরকার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লোকদেখানো নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করছে কমিশন। বিদেশি চাপে পড়ে সরকারের পরামর্শে সংলাপের চিঠি দেওয়া হয়েছিল; যা ছিল এক ধরনের নাটক। আর কোনো নাটকের অংশ হতে চায়নি দলটি। কেননা ইসির সঙ্গে সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই ছিল বিএনপি হাইকমান্ডের। শুধু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের সংলাপ বাদে অন্য কোনো আলোচনায় তারা অংশ নেবে না।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আলোচনায় রাজি হলে বিএনপি সংলাপে অংশ নেবে। এক্ষেত্রে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তাদেরই তৈরি। সমাধানের উদ্যোগও তাদের নিতে হবে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালবেলাকে বলেন, সরকার যদি সংঘাত এড়িয়ে সামনের দিকে এগোতে চায় তাহলে বিরোধী দলগুলোর দাবি মেনে নিয়ে প্রথমে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা ২০১৮ সালে তাদের কথা বিশ্বাস করে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরিণতি কী হয়েছে, তা সবাই দেখেছেন। তারা পদত্যাগ করুক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কথা বলতে সম্মত হোক। তাহলেই তো হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত ও অবৈধ। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।

অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার গতকাল কালবেলাকে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তো অবৈধ ও অনির্বাচিত। তারা কীসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবে? তারা কি বলল না বলল, সেটা বিবেচ্য নয়। তাদের সবার আগে পদত্যাগ করতে হবে। তারপরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে হবে বা বিএনপি সংলাপে যাবে কি না, সেটা নিয়ে কথা বলা যাবে। এ বিষয়ে বিএনপি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451