ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের আকার (সদস্য সংখ্যা) বাড়ছে না। এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ প্রস্তাব করা হলে শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দেন বলে জানা গেছে। সভায় দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়।
শনিবার (১১ জুন) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভায় দলের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের পক্ষ থেকে দলের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭৩। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
এ সময় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে কী হবে? সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে সভা করার সময় মিলনায়তন ভাড়া করবো না কি?
সূত্র আরও জানায়, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি বলে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি হলে কি হবে, বেশি হয়ে লাভ কি তারা তো সভা করতে পারবে না।
এদিকে সভায় আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে নতুন সংযোজন আনার সিদ্ধান্ত হয়। ভিশন-২০৪১ এ কি ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে, আর্থ-সামাজিক, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কী পরিকল্পনা করে এগোনো হবে তার একটি দিক-নির্দেশনা দলের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হবে। এ বিষয়গুলো ঘোষণাপত্রে সংযোজন করা হবে।
সম্মেলন পেছানোর কারণ সম্পর্কে জানা যায়, ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে ৮ ও ৯ জুলাই শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন পড়েছে। ১০ জুলাই সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা ছিলো। ছুটির পর এটাই প্রথম কার্য দিবস। এই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা আসবেন। সব মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে থাকবে না। এছাড়া বর্ষাকালের এই সময়টায় আবহাওয়াও থাকে প্রতিকূল ও বৈরি। ঝড়-বৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হতে পারে যেটা সাজসজ্জার জন্য অনুকূলে নয়। এ কারণেই নির্ধারিত ১০ ও ১১ জুলাই থেকে পিছিয়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সভায় সম্মেলনের তারিখ পেছানোর সঙ্গে বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। এর আগেও এক দফায় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছিলো। চলতি মাসেই ওই মেয়াদ শেষ হবে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর।
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর দলের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী গত বছর ২৮ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।
সূত্র জানায়, সভায় দলের কত তম জাতীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন সভায় বলেন, বলা হচ্ছে এটা ২০তম সম্মেলন। আসলে এটা ২১তম সম্মেলন। এর পিছনে তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এ সময় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। এটা দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন, ২১ তম না।
এ সভায় আওয়ামী লীগের সদ্য গঠিত ৭টি জেলা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলাগুলো হলো, খুলনা, নড়াইল, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও পিরোজপুর। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।