কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে ভারত। কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদ্বীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় উভয় দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় নতুন এ সিদ্ধান্ত নিলো ভারত। খবর বিবিসির।
ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভিসা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বিএলএস এমন সিদ্ধান্তের জন্য ‘অপারেশনাল কারণকে’ দায়ী করে তাদের ওয়েবসাইটে একটি বার্তা পোস্ট করেছে।
এই সপ্তাহে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার হত্যার সঙ্গে ভারতের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ তদন্ত করছে বলার পরে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রকাশ্যে আসে। ভারত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি বলেছে, এই অভিযোগ ‘অযৌক্তিক’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে টানাপোড়েন থাকা দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক এখন সর্বকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভিসা স্থগিতের বার্তাটি প্রথম বিএলএস ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়। এতে বলা হয়, ‘ভারতীয় মিশনের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে অপারেশনাল কারণে ভারতীয় ভিসা পরিষেবা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বিবিসিকে বিএলএস ওয়েবসাইট দেখতে বলা হয়েছে। ভারত তার নাগরিকদের কানাডায় ভ্রমণ বা বসবাস করার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করার একদিন পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
দিল্লি বলেছে, সম্প্রতি ভারতীয় কূটনীতিক ও কিছু নাগরিককে (যারা ভারতবিরোধী এজেন্ডার বিরোধিতা করে) হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, হরদ্বীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ‘ভারত সরকারের এজেন্ট’ জড়িত কি না, তা তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিজ্জার কানাডার নাগরিক। ২০২০ সালে তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে ভারত। ১৮ জুন কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারি শহরের একটি গুরুদুয়ারার বাইরে দুই অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন তিনি।
সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের যেকোনো ধরনের সম্পৃক্ততা আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, যা অগ্রহণযোগ্য।’
ভারত কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, কানাডা ‘খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী ও চরমপন্থিদের থেকে দৃষ্টি সরানোর’ চেষ্টা করছে। তাদেরকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
প্রায়ই পশ্চিমা দেশগুলোতে থাকা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খালিস্তান বা আলাদা শিখ আবাসভূমির দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত সরকার।
১৯৮০-এর দশকে শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাব রাজ্যে সহিংস বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ভারতে খালিস্তান আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিল। এটিকে ওই সময় বলপ্রয়োগ করে দমন করা হয়েছিল এবং এখন ভারতে এর তেমন প্রভাব নেই। কিন্তু, এখনও বিষয়টি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে কিছু শিখ প্রবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়।
কানাডায় পাঞ্জাবের বাইরে সর্বাধিক সংখ্যক শিখ রয়েছেন এবং দেশটিতে বেশ কয়েকটি খালিস্তানপন্থি বিক্ষোভ হতে দেখা গেছে।
গত জুনে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারত তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কানাডার কাছে একটি ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ উত্থাপন করেছে।