শুক্রবার দিল্লিতে বৈঠকে বসেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এই বিবৃতিটা যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার যে সরকার, সেই সরকারের প্রতি ভারত স্পষ্টভাবে তার সমর্থন জানাচ্ছে। কেননা এই সরকার থাকলে আর যা-ই হোক, জামায়াত ও মৌলবাদী শক্তির দাপট থাকবে না। আজ যখন গোটা পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ে আতঙ্কিত। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের বিবাদ, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার বিবাদ, চীনের সঙ্গে যখন ভারতের বিবাদ, এমনকি তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদ, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমেরিকার বিবাদ, জাপানের সঙ্গে যখন উত্তর কোরিয়ার ঝামেলা। এই পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ভারতের প্রয়োজন। আর শুধু প্রয়োজন নয়, বাংলাদেশের যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মৌলবাদীদের হাতে চলে গেলে, আয়তনে যতই ছোট হোক বাংলাদেশ, তার ভয়াবহ কূটনৈতিক সমস্যা তৈরি হবে, যেটা ভারতের কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়।
এই টু প্লাস টু ডায়ালগের জন্য বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন, এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও ভারতকে বিশেষভাবে প্রয়োজন। প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার পাশাপাশি কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যেটাকে সংক্ষেপে বলা হয়, ‘এআই’, সে জন্যও কিন্তু আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রয়োজন ভারতের সঙ্গে সন্ধি স্থাপনে। এটাকে কূটনীতির পরিভাষায় বলা হচ্ছে এআই ব্রিজ। পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা যখন প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার যে পারস্পরিক শরিকি সম্পর্ক দিল্লিতে আলোচনা করছেন, সেখানে কিন্তু এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহযোগিতা একটা মস্ত বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই কৃত্রিম মেধা নিয়ে একটা বিশেষ নির্দেশ জারি করেছেন। অন্য বিষয়টা হলো, পেন্টাগন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে একটা আপডেটেড কৌশল প্রকাশ্য নিয়ে এসেছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাহিনী সেটার তদারকিতে ব্যস্ত। বাইডেনের এই যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ডিলটা আজকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করতে চাইছে।
ভারত ন্যাটোর সদস্য নয়, সুতরাং ভারতের ওপরে সেটা কোনো রকমভাবে বাধ্যতামূলক কোনো শর্ত আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দিতে পারে না। কিন্তু এই কৃত্রিম মেধার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার যে বিভিন্ন সিভিলিয়ান ইউজ; অর্থাৎ নাগরিক ব্যবহার, সেটাও কিন্তু পেন্টাগনের স্ট্র্যাটেজির মধ্যে রয়েছে। যে বিষয়গুলো আজকে ভারতের মতো একটা এত বিরাট জনবহুল দেশের সমর্থন প্রয়োজন আমেরিকার, বিশেষত চীনকে মোকাবেলা করার জন্য। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর আত্মজীবনীতে পর্যন্ত লিখেছেন, আগামী দিনে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সংঘাত, সেই সংঘাত কিন্তু মূলত আসছে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক। অর্থাৎ কনভেনশনাল যুদ্ধের রণকৌশল বদলে যাচ্ছে। চীনও বদলে ফেলছে।
সেই লুনসুর আর্ট অব ওয়ার-এর সময় অতিবাহিত। এখন আসছে নুতন নতুন প্রযুক্তি, যেখানে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর এ ব্যাপারে ভারতকে বিশেষভাবে আমেরিকার পাশে প্রয়োজন। এটাকে এককথায় বলা যেতে পারে টেকনোলজি ওয়ার। ভারত আমেরিকার এই চাহিদার সুযোগ নিতে চায়। কিন্তু তার পাশাপাশি ভারত আমেরিকার মাথায় এটাও ঢোকাতে চায় যে বাংলাদেশের মতো একটা ছোট রাষ্ট্রের ভোট নিয়ে আমেরিকার অহেতুক নাক গলানো ঠিক হয়নি।
বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার যে অস্থিরতা, এটা একটা সাময়িক রণকৌশল, সেটা কিন্তু ভারত বাধ্য করেছে আমেরিকাকে বোঝাতে যে এটা টু প্লাস টু ডায়ালগের যে সার্বিক প্রেক্ষাপট, তার সঙ্গে কিন্তু কখনোই মেলে না। সেই কারণে বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথে চলতে দিতে হবে। এবার টু প্লাস টু ডায়ালগে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটা বুঝতে পেরেছে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাসচিব, পররাষ্ট্রসচিব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেও বাংলাদেশের ব্যাপারে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
টু প্লাস টু কথোপকথনে ভারত অভূতপূর্ব চাপ সৃষ্টি করল বটে বাংলাদেশের জন্য, কিন্তু সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য বা ভূমিকাটা কী, সেটা নিয়েও অনেক পাঠক জানতে চাইছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে যেটা জানতে পারলাম, এবার আমেরিকার ওপরে যে চাপ সৃষ্টিটা ভারত করেছে, সেটা অভূতপূর্ব এবং সেটা আমেরিকা অনেকটাই বুঝতে পেরেছে যে চীনকে যদি মোকাবেলা করতে হয়, তার জন্য কিন্তু বাংলাদেশকে পাশে রাখাটা বিশেষভাবে প্রয়োজন।