ঢাকা: শিশুদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা রাজধানীর শাহবাগ শিশুপার্কটি যেন হকারদের পার্কে পরিণত হয়েছে। পার্কের ভেতরে কোনো হকার কিংবা খাবার দোকান থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে শত শত হকারদের দখলে চলে গেছে পার্কের এক তৃতীয়াংশ জায়গা।
এর ফলে এখানে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা প্রতিবাদ করতে গেছেন তাদের অপমানিত হতে হয়েছে।
প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এর প্রতিরোধ না করে দেখেও না দেখার ভান করে বসে আসেন শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্কের সহকারী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান বাংলার প্রতিদিন কে বলেন, ‘পার্কের ভেতরে হকার কিংবা খাবারের দোকান সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ অবৈধ কাজ চলছে। আমরা এর বিরোধিতা করতে চাইলে প্রভাবশালীরা আমাদের বিভিন্নভাবে ফোন করেন। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা হকারমুক্ত করতে পারি না’।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশুপার্কের পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম পাশে বিশাল জায়গা নিয়ে চারটি চটপটি ও ফুচকা এবং বার্গারসহ ৫ ধরনের খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ পাশে উড়ন্ত বিমানে উঠতে আসা শিশু ও অভিভাবকরা লাইনেই দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছেন না।
এখানে দিনমজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে আসা একাধিক কর্মচারী জানান, দিনে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আগামী রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এ জায়গায় ব্যবসা করার অনুমতি নিয়েছেন তাদের মালিক।
এ দোকানের সামনে ফ্রিজে রাখা লাচ্ছি, সেমাই, দইয়ের দোকান দিয়েছেন হারুন নামের একজন কর্মচারী। তিনি জানান, গত দু’দিনে বিক্রি কম হওয়ায় মাত্র ১ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। তবে আজকে বিক্রি একটু বেশি আরো একটু বেশি হয়েছে।
হারুন জানান, এখানে ব্যবসা করার জন্য তিনি দৈনিক ৫ হাজার টাকার ঘুষ দেন। তার মতো এখানে আরা ৩৬ জন ব্যবসায়ী এ ব্যবসা করছেন। তারা সবাই দিনে ৫ হাজার টাকা নেতাদের দেন।
আইসক্রিম বিক্রেতা কালু মিয়া জানান, তিনি এখানে ব্যবসার জন্য দিনে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দেন।
এছাড়াও মুড়ি ও পেয়ারা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৩শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা, বেলুন বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৩শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা, লেবুর শরবত বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা- এভাবে শত শত হকারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য করছেন সুবিধাভোগীরা।
পার্কে নিবন্ধিত একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন, ঘর ভাড়ার পাশাপাশি পানি ও বিদ্যুৎ বিল দিয়ে সারা বছর অনেকটা ভর্তুকি দিয়ে ব্যবসা করেন তারা। তারা পহেলা বৈশাখ, দুই ঈদের দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকেন। এসময় যে ব্যবসা হবে তা দিয়ে সারা বছরের ব্যবসা পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু হকারদের থাবায় তাদের সেই ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এখানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্ট হবে।
পার্কটিতে মোট ১৫টি দোকান নিবন্ধিত রয়েছে।
পার্কে আসা বাসাবোর বাসিন্দা আফরোজা জাহান অভিযোগ করেন, এমনিতে দর্শনার্থীদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তার ওপরে পার্কের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে আছেন হকাররা। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে আসা-যাওয়া কষ্ট হয়।
উত্তরা থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, বাচ্চারা যখন যা দেখে তাই কিনে দিতে বলে। ফলে তাদের ঘুরে দেখানো কিংবা খেলাধুলা করানোর মতো সময় কম পাওয়া যায়।