বাংলাদেশ ব্যাংকের জমা রাখা ডলার চুরির পুরো ঘটনা বের করেছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনা কেমন করে ঘটেছে, কত দিনের পরিকল্পনা ছিলো তাও বের করেছে কমিটি।
সেই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরও চিহ্নিত করেছে। এমনকি যারা এই ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারতেন কিন্তু যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে তাদের নাম পরিচয়ও বের করতে পেরেছে তদন্ত টিম। কিন্তু এখনই তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তা প্রকাশ করতে গেলে কিছুটা জটিলতা তৈরি হবে। এই কথাগুলো জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি আমরা গঠন করেছি সেই তদন্ত কমিটি চেষ্টা করেছে ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে। এছাড়াও আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই ব্যাপারেও সুপারিশ করেছে। সরকারের ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকেও কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আনুসঙ্গিক বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। আমি নিজে রিপোর্টটি দেখেছি। কত পৃষ্ঠার রিপোর্ট জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বড় ও মোটা রিপোর্ট। ১৫০ পৃষ্ঠা হবে।
আপনি কি বলতে পারেন ওই রিপোর্টে কাদেরকে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ? এমন প্রশ্নের উত্তিরে তিনি বলেন, এটা এখন বললে কিছুটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। কারণ আমরা আগে টাকাটা উদ্ধার করতে চাইছি। টাকাটা উদ্ধার করার জন্য আমরা মামলা এখনও করছি না। তবে মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি, সাক্ষী প্রমাণসহ সব সংগ্রহ করেছে। তদন্ত রিপোর্টটি জমা হওয়ার পর আমরা ওই রিপোর্টের পুরোটাই জেনেছি। মন্ত্রীও জেনেছেন। পরেছেন। এছাড়াও আরো কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রিপোর্টটি পড়ার জন্য। তারা রিপোর্ট পড়ে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন এবং পদক্ষেপ নিবেন।
দোষীদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরবর্তীতে তারা দেশ ছেড়েও তো চলে যেতে পারেন সেই ক্ষেত্রে কি তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে ? জবাবে তিনি বলেন, তারা চাইলেই যেতে পারবেন না। আমি এটুকু বলতে পারি। এই ঘটনায় যাদের সামান্যতম গাফলতি রয়েছে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। কিন্তু আমরা মনে করছি এখন এখানে আমরা একটা মামলা করে বসলে তখন ওই দেশের সরকার ও ব্যাংকও বলতে পারে যে আমরা মামলা করেছি। মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা এই ব্যাপারে আর এগুবে না। কিন্তু আমরা সেটা চাইছি না। আমাদের এখানে যারা আছে তাদের ব্যাপারে যে কোন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ফিলিপাইনের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে খুঁজে বের করুক আমাদের বাকি সাড়ে ৬ কোটি ডলার কোথায়, কার কাছে এবং কিভাবে আছে। তাদের আইনশৃক্সখলা বাহিনীও এই ব্যাপারে কাজ করছে। আমরা ওই অর্থের সন্ধান যদি পাই তাহলে সেই অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য যা যা করার সবই করছি। অন্যান্য সহায়তা ফিলিপাইনের সরকার চাইলেও তা করা হবে। ওই অর্থ ফেরত পাওয়া গেলে আমরা এই ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি। আর যদি কোনও ভাবেই টাকার সন্ধান না পাওয়া যায় সেই ক্ষেত্রে আমাদেরকে অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য বিকল্প পথে যেতে হবে। ওই দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা সফল হলে অর্থ পাওয়া সহজ হবে। না পাওয়া গেলে তখন আমরা ফিলিপাইনের আদালতে মামলা করবো। সেই ক্ষেত্রে অনেককেই আসামী করা হবে।
তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে সেখানে কি ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপালনকারীদের যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। চুক্তি বাতিল করে অব্যাহতি দেওয়া হয় এমন কেউ জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছেন কিনা এই ব্যাপারে রিপোর্টে উল্লেখ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এটা বলতে চাই না। সব কিছুই আপনারা জানতে পারবেন।
রিপোর্ট প্রকাশের সময় বাড়ানোর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর ইচ্ছে ছিলো ২২ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট প্রকাশ করবেন। কিন্তু এখন সময় লাগবে। সব দিক বিবেচনা করেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, রিপোর্ট প্রকাশে দেরি হলেও চিন্তার কিছু নেই। কারণ জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার কাছে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন পাঠানো হয়, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা এক মাস গোপন রাখা হলো কেন, এর পেছনে যারা ছিলো, তাদের অবহেলার বিষয়টি ও অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা পর্যাপ্ততা কিনা এবং আগামী দিনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও তারা বের করেছে। প্রতিবেদন প্রকাশে দেরি প্রসঙ্গে বলেন, ওই দেশের আদালত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আগে অর্থ ফেরত আসুক। এখন প্রকাশ করা হলে একটা সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আইনী মতামত এসেছে। এই কারণেই কিছুটা সময় নেওয়া হবে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই রিপোর্ট আমরা প্রকাশ করবো। এর আগে কোন তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি, এটা কি আলোর মুখ আদৌ দেখবে নাকি এখানে ইতি এই ব্যাপারে তিনি বলেন, এই সরকার অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে এই কাজটি করার চেষ্টা করছে। আর এরই অংশ হিসাবে রিপোর্টটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণেরও এই ব্যাপারে জানার অধিকার আছে। তাই আমরা সময় মতো সবাইকে জানাবো।