ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা,বরগুনাঃ ১২-১৩ বছর বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাদের। ১৫তে মা। কেউ
আবার বয়স ২০ না পার হতেই হন বিধবা। এই হচ্ছে পাথরঘাটার জেলেপল্লির নারীদের জীবন। বিভিন্ন সময় জলদস্যুদের
হাতে নিহত হন এদের স্বামীরা। অভাব-অনটনে জীবনভর সংসারের ঘানি বয়ে বেড়ান এসব নারী। হয়ে থাকেন পরিবারের
বোঝা। এ রকম অনেক পরিবারের দেখা মেলে পাথরঘাটার জেলেপল্লিতে।
পাথরঘাটার হাঁড়িটানা এলাকার বাসিন্দা রুমা আক্তার। তার স্বামী জাফর আকনকে ২০১৪ সালের রমযান মাসে
জবাই করে মেরে ফেলে জলদস্যরা, একই সময় আরও ১১জণকে মেরে ফেলা হয় । সেই থেকে দুই সন্তান নিয়ে
অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। মামলাও করতে পারেননি। রুমার মতোই আরেক হতভাগ্য রূপধন গ্রামের দরিদ্র
জেলেবধূ সুরমা। মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার। ১৫ বছর বয়সে মা। এখন তার ২০ বছর। এই বয়সেই বিধবা সে।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কদিন আগে জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হন স্বামী ইসমাইল। বড় মেয়ে রাইসার বয়স পাঁচ
বছর। নিজেরই কোল থেকে নামবার সময় হয়নি তার। অথচ ছোট বোন সুমাইয়াকে দেখভালের দায়িত্ব এখন তার কাঁধেই।
জন্ম-মৃত্যুর রহস্য বোঝে না রাইসা। সাগরে মাছ ধরা শেষে তার জন্য স্যান্ডো গেঞ্জি, লাল ফিতে, লেখার খাতা আর জিলাপি
নিয়ে বাবা বাড়ি ফিরবেন বলে এখনো পথ চেয়ে বসে থাকে সে। অন্যদিকে ক্ষুদের জাউ আর চালের গুঁড়ার পানসে দুধে পেট
ভরলেও মন ভরে না সাত মাস বয়সি শিশু সুমাইয়ার। খানিক পরপরই কান্নার সুরে সে জানান দেয় ক্ষুধার উপস্থিতি।
বাড়িঘর মিলিয়ে মাত্র তিন কাঠা জমি রেখে গেছেন ইসমাইল। শ্বশুর বেঁচে নেই। শাশুড়িও তাদের ফেলে চলে গেছেন অন্যত্র।
প্রতিবেশীরা ও এখন আর সহযোগিতার হাত বারাচ্ছে না। ছোট ছোট দুই শিশুকন্যা নিয়ে সুরমা এখন কোথায় যাবেন?
কার কাছে গেলে মিলবে আশ্রয়? এর উত্তর জানা নেই সুরমার।আর এ বিষয় কথা হয় উন্নয়ন প্রকল্প ‘জাগো নারী’র প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনেয়ারা হাসির সাথে তিনি বলেন, সুরমা ও রুমার মতো জলদস্যুদের হাতে নিহত পরিবারের
পুনর্বাসন অত্যন্ত জরুরি। সরকারসহ বিত্তবানদেরও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।