কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
বদরুল একটি স্কুলের শিক্ষক উল্লেখ করে ছাত্রলীগ বলছে, সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী কেউ চাকরিতে যোগ দিলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়।
শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে সহসম্পাদক পদে ছিলেন বদরুল আলম। চলতি বছরের ১০ মে কমিটির নাম প্রকাশ করা হয়। এর দুদিন আগে কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আর খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ২০১৪ সালে চাকরিতে যোগ দেন বদরুল আলম। এখন পর্যন্ত তিনি স্কুলটির শিক্ষক। চাকরিতে বহাল থাকা অবস্থাতেই তিনি ছাত্রলীগের কমিটিতে সহসম্পাদকের পদ পেয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, ‘যেহেতু বদরুল আলম বর্তমানে ছাতক উপজেলার আলহাজ আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন; বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিয়মিত ছাত্ররাই সংগঠনের সদস্য হিসেবে সক্রিয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। চাকরিজীবীরা নন। সে হিসেবে সাংগঠনিক নিয়মেই কর্মক্ষেত্রে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সদস্যপদ বাতিল বলে গণ্য হবে।’
সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে নার্গিসকে কোপানোর ঘটনা বদরুলের ব্যক্তিগত নৃশংসতা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কারো ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায়ভার সংগঠন নেবে না।
ছাত্রলীগের আহ্বান : শাবিপ্রবি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু বদরুল আলম বর্তমানে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং অন্যত্র একটি পেশায় কর্মরত, তাই সকল প্রকার গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সন্ত্রাসী বদরুল আলমের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে যাতে না জড়ানো হয়। গতকালের ঘটনায় আহত খাদিজা আক্তার নার্গিস ও তাঁর পরিবারের এই দুঃসময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং শাহজাহাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সার্বক্ষণিক পাশে থাকবে। সন্ত্রাসী বদরুল আলমের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আলহাজ আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার দাস আজ সন্ধ্যায় জানান, খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ২০১৪ সালে বদরুল আলমকে নিয়োগ দেন তাঁরা। স্কুলটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এবং সে সময় বদরুল স্নাতক পাস না করায় শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক সনদ থাকায় তাঁকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় থেকেই স্কুলটিতে বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণের ক্লাস নিতেন তিনি। তবে এ জন্য কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতেই বদরুল তাঁদের স্কুলে পড়াতেন বলে জানান পবিত্র কুমার দাস।
প্রধান শিক্ষক বলেন, যেহেতু স্কুলটি এমপিওভুক্ত নয়, বেতন-ভাতা কম দেওয়া হয়, সে কারণে সহজে ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। বদরুল আলম খণ্ডকালীন শিক্ষক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আজ স্কুলে গিয়ে নার্গিসকে কোপানোর খবর জানতে পারেন জানিয়ে পবিত্র কুমার দাস আরো বলেন, বদরুলকে তিনি ভালো ছেলে হিসেবেই জানতেন। তিনি যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেন সে রকম কোনো আভাসও তারা আগে পাননি।
গতকাল সোমবার বিকেলে সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ ক্যাম্পাসে সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন ছাত্রলীগ নেতা বদরুল ই্সলাম। হামলার পর খাদিজাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করার পর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।
আজ সন্ধ্যায় নার্গিসের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।