সিলেটের পর এবার লক্ষ্মীপুরে ফারহানা আক্তার (৩২) নামের এক কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের শাখারীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ফারহানা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী। তিনি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার আদাবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রহমান খাঁনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফারহানা লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের শাখারীপাড়া এলাকায় সবিতা রাণী নামের এক নারীর বাসায় ভাড়ায় থাকেন। তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পরীক্ষা দিচ্ছেন। ইতিপূর্বে তিনি লক্ষ্মীপুরে বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর মা-মনি প্রকল্পের কর্মী ছিলেন।
পরীক্ষা শেষে গতকাল বিকেল সবিতার বাসা থেকে পাবনা যাওয়ার উদ্দেশে বের হন ফারহানা। অপেক্ষা করেও বাস কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে গতকাল রাতে আবার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে তিনি দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন।
ফারহানাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ সময় তাঁর চিৎকারে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় তাঁকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, লক্ষ্মীপুরে কর্মরত অবস্থায় লক্ষ্মীপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশফাকুর রহমান মামুনের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ৩০ লাখ টাকা দেনমোহরে সিলেট এলাকার ‘সুরমা ভ্যালি’ নামের রেস্ট হাউজে মামুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেওয়া নিয়ে মামুনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়।
ফারহানা আরো বলেন, মুঠোফোনে কথাবার্তা ও বিয়েসংক্রান্ত সব কিছু রেকর্ডিং আছে তাঁর কাছে। পরবর্তী সময়ে মুঠোফোনে ডা. মামুন তাঁকে হত্যার হুমকি দেন এবং লক্ষ্মীপুর না আসতে বলেন।
ফারহানার অভিযোগ, পরীক্ষা দিতে লক্ষ্মীপুর আসায় মামুন তাঁকে হত্যার উদ্দেশে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালান।
লক্ষ্মীপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা. আশফাকুর রহমান মামুন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এর আগেও ফারহানা লক্ষ্মীপুর ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’-এ কাজ করার সময় মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছিল। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে সে।’
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আনোয়ার হোসেন জানান, আহত কলেজছাত্রী ফারহানাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পেটে ও বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
এদিকে কলেজছাত্রীকে কোপানোর খবর পেয়ে লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সার্কেল) মো. শাহনেওয়াজ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহজ আল মামুন হাসপাতালে আহত ছাত্রকে দেখতে গেছেন। এ সময় তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
গত সোমবার ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা। বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম (২৭)। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা বদরুলকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
ঘটনার দিন গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেটে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন মঙ্গলবার তাঁকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছেন খাদিজা।