প্লাবন গুপ্ত শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আগামীকাল সোমবার ১০ অক্টোবর দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের চড়ারহাট ও সরাইপাড়া গণহত্যা
দিবস। ৭১এর এই দিনে এদেশীয় কুখ্যাত রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামসদের সহযোগিতায়
পাকিস্তানী খানসেনারা এই দুই গ্রামের ৯৮জন মুক্তিকামী নিরীহ বাঙালী নারী ও পুরুষকে
নির্বিচারে গুলি ও বেয়নেট চার্জে হত্যা করে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঘোড়াঘাট থেকে একদল খানসেনা
বিরামপুর ক্যাম্পে যাওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধা তাদের আক্রমণ করে দুইজনকে হত্যা করে এবং অন্যরা
পালিয়ে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী এলাকার কুখ্যাত আল সামস বাহিনীর কমান্ডার জামাত নেতার
নেতৃত্বে খানসেনার ১০অক্টোবর ভোরে চড়ারহাট (প্রাণকৃষ্ণপুর) ও সরাইপাড়া
(আন্দোলগ্রাম) ঘিরে ফেলে। আযানের ধ্বণী শুণে মুসল্লিরা নামাজের জন্য গ্রামের মসজিদে
যাবার সময় খানসেনাদের উপস্থিতি টের আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নামাজ চলাকালে খানসেনারা
গ্রামের বাড়ি বাড়ি পুরুষদের ধরে নিয়ে সড়কের দক্ষিণ প্রান্তে জড়ো করে। নামাজ শেষ হওয়ার
পর মসজিদ থেকেও মুসল্লিদের ধরে একই স্থানে জড়ো করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলে
নিরীহ মানুষগুলোর ওপর মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ার। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এই বীর যোদ্ধারা।
খানদের গুলিতে একই সাথে শহীদ হন গ্রামের বীর নারী। শুধু হত্যা করেই খান্ত হয়নি খান
সেনারা। হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি নারীদের ওপর চালিয়েছিল পাশবিক নির্যাতন। এখন অনেক
বীরঙ্গনা সেই যন্ত্রণার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। সেদিন খানসেনাদের গুলির লক্ষ্যভষ্ট হয়ে
প্রাণে বেঁচে যান কয়েকজন। যারা সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে এখন বেঁচে আছেন। ঐদিন
চড়ারহাটে ২জন নারীসহ ৬৭জন এবং সরাইপাড়ায় ৩১জন বীর বাঙালী শহীদ হন।
খানসেনাদের গুলিতে থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া চড়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক
মোজাম্মেলহ (৬৩) বলেন, সেদিন ফজরের আযান শেষে মাটি কাটার কথা বলে খানসেনারা
গ্রামের পুরুষদের নিয়ে যায়। সেখানে নির্বিচারে গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। তিনিসহ
তার পিতা ও ছোটভাই মকবুল হোসেন সেখানে থাকলে তারা শহীদ হয়েছেন। ভাগ্যক্রমে তিনি
বেঁচে যান। তার বাম পা ও ডান হাতে গুলি লাগলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
সেদিন ২জন নারীসহ ৬৭জন শহীদ হন চড়ারহাটে।
সরাইপাড়া গ্রামের শহীদ আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫৬) বলেন, খানসেনারা বাড়ি
বাড়ি তল্লাশী করে পুরুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনি মসজিদে আশ্রয় নিয়ে
ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তার পিতাসহ ৩১জনকে হত্যা করে খানসেনারা।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দবিরুল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত
গণকবরগুলো সংরক্ষণসহ শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তেমন কোন উদ্যোগ সরকারিভাবে নেয়া
হয়নি। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় চড়ারহাট শহীদ স্মৃতি
মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। তবে কয়েক বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও দিনাজপুর সেক্টর
কমান্ডার ফোরাম যৌথভাবে শহীদ