মুন্সীগঞ্জ প্রতিদিন ঃ মাদকের সহজলভ্যতা ও মাদক বিক্রেতাদের
ব্যাপক বিস্তার লাভ করার ফলে যুব সমাজ আজ ধবংসের পথে চলে
যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাক নাম ফেন্সি , ফান্টু,
৬ ইঞ্চি যাই হোক না কেন পুরো নাম ফেন্সিডিল। মুন্সীগঞ্জে
স্থানীয় মাদক সেবীদের ভাষায় আরেক নেশা গুটি, আড়াই, তিন
আসল নাম ইয়াবা। আইনের চোখে মরন নেশা হলেও মাদকসেবীদের
কাছে যেন ফিলিংসটাই অন্যরকম। মুন্সীগঞ্জের
শহর,বন্দর,গ্রামগঞ্জে হাজার হাজার যুবক এ মরন নেশা ফেন্সি,
ইয়াবা ও গাঁজার প্রেমে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নদী মার্তৃক
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি মুন্সীগঞ্জ জেলায় মাদক এখন
মহামারী আকার ধারন করেছে। শহর এলাকার পাশাপাশি গ্রামেও
সহজে সব ধরনের মাদক মিলছে হাতের নাগালে।মুন্সীগঞ্জ শহর ও এর
আশপাশ এলাকার মাদকের উল্লেখ যোগ্য স্পটগুলো হচ্ছে,দক্ষিন
ইসলামপুর, যোগনীঘাট, মোল্লার চর, নয়াগাঁও,নতুনগাঁও,
মুক্তারপুর বিসিক মাঠ,মালির পাথর, মিরকাদিম, রামপালসহ অনেক
স্পটে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করতে দেখা গেছে। চরাঞ্চলের নদী
তীরবর্তী গ্রামগুলো হচ্ছে, শিলই, বাংলাবাজার, কালিরচর,চর-
আব্দুল্লাহ,বকচর, জাজিরা, কাউয়াদি, দক্ষিন চরমশুরা, আলীর টেক
এসব গ্রামগুলো মেঘনা ও পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় সহজে বিভিন্ন
জেলা থেকে মাদক সহজেই মাদক ঢুকছে বলে অভিযোগ
স্থানীয়দের। নদীতে পুলিশী নজরদারি কম থাকায় অনেক সময়
জেলেরাও মাদক পরিবহনে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। এসব
এলাকাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয় বলে পুলিশ যথাসময়ে
ঘটনাস্থলে যেতে পারেনা। আর এই সুযোগটাকে কাজে
লাগিয়ে মাদক বিক্রেতারা প্রতিটি এলাকাকে মাদকের রাজ্য
বানাচ্ছে। এসব স্পট থেকে সূলভমূল্যে মাদকাশক্তরা পাচ্ছে তাদের
কাংখিত সোনার হরিন। পেশাজীবী কিংবা সচ্চলদের মাঝে
জনপ্রিয় মাদক বিয়ার ও ফেন্সিডিল। আর স্বল্প ও মধ্যম আয়ের
মাদকসেবীরা মদ, গাজা,ইয়াবাসহ নানা ধরনের নেশা জাতীয়
ট্যাবলেট। পাশাপাশি হেরোইন ও ভারতীয় নেশা জাতীয়
ইনজেকসনের ব্যবহার তো রয়েছেই। সরেজমিনে গিয়ে
জানাযায়, জেলাটি পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী হওয়ায়
বানের জোয়ারের মত মাদক ঢুকে পড়ছে মুন্সীগঞ্জ শহর ও এর
আশপাশের গ্রামগুলোতে। পুলিশ প্রশাসন প্রতিদিন বিভিন্ন
এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রেতাদের
আটক করে কোর্টে চালান দিচ্ছে। ক”দিন পর সেই মাদক
বিক্রেতারা কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পূনরায় ফিরে যাচ্ছে
আগের সেই মাদক ব্যবসায়। আর বেশীরভাগ এলাকায় স্থানীয়
রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে মাদক বিক্রেতারা যুব
সমাজকে ধবংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পুলিশ প্রশাসন
একের পর এক মাদক বিরোধী র্যালী, আলোচনাসভা, মাদক বিষয়ে
মাসিক ওপেন হাউজ ডে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি
পুলিশিং ফোরমা, গ্রাম পুলিশ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের
নিয়ে এলাকায় সনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারনা চালিয়ে
যাচ্ছে। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রেতাদের
ধরে মামলা দিচ্ছে। থানা সূত্রে জানাযায়, গত- মাসে ১০০ টিরও
বেশী মাদক মামলা হয়েছে। উদ্ধারও হয়েছে বিপুল পরিমান মাদক
দ্রব্য। তবুও রোধ হচ্ছেনা মরনব্যাধী মাদক, মাদক নির্মূলে
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রতিটি এলাকার সাধারন মানুষকে
এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তির ব্যাপারে
পুলিশকে সঠিক তথ্য প্রদান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সদিচ্চাই
মাদক নির্মূলের বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত সুশীল
সমাজের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় মুরুব্বি বলেন, মাদক
বিক্রেতারা অনেকেই পরিচিত। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়
থাকার কারনে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পাচ্ছিনা। অভিযানে চিহ্নিত
মাদক বিক্রেতারা ধরা পড়ছেনা আর ধরা পড়লেও অল্পদিনে জামিনে
বের হয়ে যায়। বের হয়ে ফিরে যায় আগের পেশায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, মাদক
ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা
চালিয়ে আসছে। মাদক বিক্রেতারা মাদক পরিবহনের বাহন
হিসাবে স্কুল পড়–য়া কোমলমতি শিশুদেরও ব্যবহার করছেন। তিনি
আরো বলেন, নি¤œ আয়ের পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে
দিয়েও মাদক পরিবহন করে মাদক বিক্রেতারা।
এদিকে মাদকের নীল দংশনে অনেক পরিবার হারাচ্ছে তাদের আদরের
সন্তানকে। কেউ বা পঙ্ধসঢ়;গুর মত জীবন যাপন করছে। কেউ
জমিজমা, অর্থ সম্পদ হারিয়ে পথে বসেছে, কারও ভেঙ্গেছে
সংসার। কিন্তু মাদক বিক্রেতারা অল্পদিনেই লাখপতি হওয়ার বনে
যাচ্ছে। মাদক নির্মূলে প্রশাসন আরো কঠোর হস্তে চিহ্নিত
সব মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে আইনের আওতায় আনিতে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন এমনটাই দাবি
মুন্সীগঞ্জবাসীর।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম বলেন, মাদক
একটি সামাজিক ব্যাধি এটি প্রতিরোধ করতে হলে
সামাজিকভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে মাদক
প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ মাসে ১০০ টি মাদক মামলা হয়েছে
উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,শুধু পুলিশ দিয়ে মাদক নির্মূল
করা সম্ভব না। প্রত্যেকটি পরিবারের পক্ষ থেকে মাদক প্রতিরোধে
ভূমিকা রাখতে হবে। পুলিশ মাদক নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে
যাচ্ছে। তবে মাদককের বিরদ্ধে জির্যু টলারেন্স।#