”সাংবাদিকদের জন্য যে কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনলাইনকেও বিবেচনায় রাখা হবে” বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মাধ্যমকে সম্পৃক্ত করে আইন করার তাগিদ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দেন তিনি।
শনিবার বিএফইউজে ও ডিইউজের (একাংশের) ইফতার শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের দোতলায় সিনিয়র সাংবাদিক, বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার অনলাইনকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে অভিহিত করে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে সব কিছু পেপারলেস হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় ছেলে-মেয়ে বা অন্য কাউকে একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়তে বললে তারা তা অনলাইনে পড়েছে বলে জানায়।
সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জন্য পৃথক প্রেস অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছিলেন। সেখানে সাংবাদিকদের পৃথক মর্যাদা ছিল। পরবর্তীতে বিএনপি জোট সরকার সেটি বাতিল করে সাংবাদিকদের শ্রম আইনে সম্পৃক্ত করে।
এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, যখন আইনটি বাতিল করা হয় তখনি সাংবাদিক নেতারা কোথায় ছিলেন? তিনি বলেন, একটি আইন সংসদে সরাসরি পাস হয়না। যে কোনো আইন পাস বা বাতিলের আগে কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। সেক্ষেত্রে তখন কেন সাংবাদিকরা বিষয়টি মেনে নিলেন?
সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলে সিড মানি পাঁচ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ কোটি বা ১০০ কোটি টাকা করার দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে যা কিছু করার সব আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।
তিনি বলেন, ‘৫ কোটি টাকা সিড মানি নিয়ে যাত্রা শুরু করে দিয়েছি। এখন যারা ট্রাস্ট পরিচালনা করছেন তাদেরকে অনুদান সংগ্রহ করে তহবিল বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়।’
আবাসন সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএফইউজে ও ডিইউজের সাংবাদিকরা আবাসন সমস্যার কথা বলেন। তাদেরকে জমি খুঁজে দেখার কথা বললেও তারা করেন না। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের প্লট দেয়া হয়েছে। এখন দেখছি প্লট না দিয়ে আবাসন পল্লী করে দিলেই ভাল হতো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা সত্যিই কষ্টে আছেন। সত্যিকার অর্থে গ্রাম বাংলার তৃণমূলের সংবাদ জেলা সংবাদপত্রে পাওয়া যায়। তিনি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে আগামীতে জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি রাখার পরামর্শ দেন।
তিনি আরো বলেন, মালিক কাম সম্পাদকদের অধিকাংশই যোগ্যতাবলে সম্পাদক নন। তারা এ পরিচয়ে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অষ্টম ওয়েজবোর্ড যেখানে বাস্তবায়ন হয় না সেখানে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণাই কি যথেষ্ট। এ ব্যাপারে সাংবাদিক নেতাসহ সকলকে আরো সোচ্চার হতে হবে। এ জন্য নীতিমালা করা হচ্ছে।
বিএফইউজের সাবেক নেতা ও একুশে টেলিভিশনের সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (নিউজ) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজে সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, বিএফইউজি যুগ্ম মহাসচিব পুলক ঘটক, বিএফইউজে নেতা মধুসুদন মণ্ডল ও মফিদা আকবার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, বিএফইউজের চট্টগ্রাম জেলার সহসভাপতি শহীদুল আলম, রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, বিএফইউজের খুলনা জেলার সহসভাপতি মনোতোষ সাহা, ডিইউজে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানা শিউলী, জনকল্যাণ সম্পাদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবু, বিএফইউজে নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি শাহ আলম, ফটো সাংবাদিক শফিউর রহমান বিটু, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা মোজ্জামেল হোসেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান, ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী ও দফতর সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল প্রমুখ।