প্লাবন গুপ্ত শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের গোপালপুর, তিলাইপাড়া ও
কামারডাঙ্গা এই ৪ গ্রাম আদিবাসী গ্রাম নামে পরিচিত। এই ৪ গ্রামে ১১৫
আদিবাসী পরিবারের বসবাস। পেশায় প্রায় সকলেই কৃষি শ্রমিক। আশ্বিন মাস
থেকে অগ্রহাণ মাস পর্যন্ত হাতে তেমন কাজ-কর্ম থাকে না তাদের। এ সময় অলস সময়
কাটে তাদের। হাতে কাজ না থাকায় অভাবের তারনায় আগাম শ্রম বিক্রিসহ
বিভিন্নভাবে ধারদেনা করতে হয়। তাদের ভাষা এই সময়টুকু তাদের কাছে কষ্টের সময়।
কষ্টের সময়টা পার করতে গ্রামের আদিবাসী নারীরা হাতে শাবল (খন্তা) খন্তা নিয়ে দলে
দলে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়েন ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দুরের বন এলাকা থেকে বন
আলু সংগ্রহের জন্য। অবশ্য তাদের শিশু-কিশোর সন্তানরাও সাথে যায় বন আলু
সংগ্রহের জন্য। যেটি তাদের রাতের খাবার হয়।
বন আলু সংগ্রহে যাবার পথে গতকাল রবিবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায়
দেখা হয় শিবনগর ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দেখা হয় একদল আদিবাসী
নারীর সাথে। সাথে রয়েছে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর- কিশোরী। প্রত্যেকেরই হাতে
রয়েছে মাটি খোঁড়ার শাবল (খন্তা)।
গোপালপুর গ্রামের আদিবাসী গৃহবধূ গোলাপী মুরমু (২৮), দুলালী সরেন
(৩৫), পাউলিনা বেসরা (৩৩), তিলাইপাড়ার সনতি সরেন (২৯) ও কামারপাড়ার মনি চঁড়ে
(৩১) বলেন, বেঁচে থাকার একমাত্র কাজই হচ্ছে ক্ষেত-খামারে মজুরি দেয়া। কিন্তু এ সময়
ক্ষেত-খামারে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। সংসারের অভাবের কারণে
ধানদেনা করতে হয়। বাধ্য হয়ে অনেকে গৃহস্থদের কাছে আগাম শ্রমও বিক্রি করে দেন।
কিন্তু তারা আগাম শ্রম বিক্রি কিংবা ধারদেনা না করে রাতের খাবারের জন্য প্রতিদিন
সকালে দল বেঁধে ৭ থেকে ৮কিলোমিটার দুরে রামরাইপুর শাল বাগানের মাটির নিচে
থাকা বন আলু খুঁড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এক একজন আন্তত
১৩ থেকে ১৫ কেজি বন আলু সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরেন। এই আলু খুবই তেতো হওয়ায়
আগের দিন সিদ্ধ করে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভাতের পরিবর্তে সেগুলো
খেয়ে থাকেন।
এলাকার আদিবাসী নেতা ইপিল হাঁসদা বলেন, এ সময় আদিবাসীদের হাতে
কাজকর্ম থাকে না বলেই কমবেশি সব পরিবারেই অভাবে থাকে। অনেকে অভাবের কারণে
আগাম শ্রম বিক্রিসহ ধারদেনা করে থাকেন। তবে কম মূল্যে আগাম শ্রম বিক্রি করতে
হয়। আবার ধারদেনা করতে গেলে চড়া সুদ দিতে হয়। অনেকের জন্য এগুলো মরণফাঁদ হয়ে
দাঁড়ায় বলে এগুলো না করে বন আলু সংগ্রহ করে ভাতের পরিবর্তে সেগুলো খেয়ে থাকে।
সরকার হতদরিদ্রদেরকে ১০টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার ব্যবস্থা করলেও বেশির ভাগ
আদিবাসীই সেই কার্ড পায়নি। সরকারের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকেও
আদিবাসী বঞ্চিত হয়ে থাকেন।