ঢাকা: ‘পাল্লা খালি ৩০ টাকা, কেজি মাত্র ৬ টাকা’- একটানা চিৎকার করেও ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না শহিদুল। বেলা ১১টাতেও তার সামনে পটলের পাহাড়! পাশেই বিক্রির অপেক্ষায় বস্তাবন্দি ১৮ মণ পটল। কিন্তু ক্রেতা নেই।
এই চিত্র মঙ্গলবারের। সাভারের গেন্ডা পাইকারি কাঁচা বাজারের। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে পাইকাররা বস্তায় বস্তায় কাঁচা তরিতরকারি (কাঁচা মাল বলে পরিচিত) নিয়ে এসেছেন এখানকার আড়তে।
শহিদুল কাজ করেন মামুন ট্রেডার্স নামের আড়তে। সেখানে কেবল পটলই নয়, ক্রেতার অপেক্ষায় পড়ে আছে গোল বেগুন, শশা, লাউ, ঢেঁড়সসহ কাঁচামাল।
বেলা বাড়ছে। ক্রেতা কমছে। পাল্লা দিয়ে কমছে মালের দাম। আর দাম যতই কমছে ততই মাথায় হাত পড়ছে পাইকারদের।
কাঁচামালের ব্যবসায়ী একরামুল রাজশাহী থেকে বস্তা প্রতি ৯০ কেজি ওজনের ২৫ বস্তা পটল নিয়ে এসেছেন এই আড়তে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শুকিয়ে যেতে থাকে তার চেহারা। অবিক্রিত কাঁচামালের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। আবার দু’ একজন ক্রেতা যখন আসেন তখন ৫ কেজি ১০ কেজি মালে ক্ষতির হিসেবটাও কষেণ মনে মনে।
একরামুল জানান, সেখানকার বাজার (মোকাম) থেকে কেজি প্রতি পটল কিনেছিলেন ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকায়। এর বাইরে পরিবহন খরচ, কুলি ও ভ্যান খরচ মিলিয়ে কেজি প্রতি পটলে পড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
লাভ করতে চাইলে কেনার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। আর লাভ হোক বা ক্ষতি হোক, মাল বিক্রির পর আড়তদারকে কমিশন হিসেবে দিতে শতকরা ৫ টাকা।
আড়তের কর্মচারী শহিদুল বলেন, ৬ টাকা কেজিতে ক্রেতা না পেয়ে এখন বেলা বেড়ে যাওয়ায় পটল বিক্রি করছি ৪ টাকায়। এটা কাঁচামাল। যত বেলা বাড়বে ততই কমতে থাকবে চাহিদা, সঙ্গে দামও।
কেজি প্রতি পটলে ১০ টাকা ক্ষতিতে তো এখন পুঁজি-চালান দুটোই খোয়ানোর পথে একরামুল। আরেকটি আড়তে পটল নিয়ে বসেছিলেন সোহরাব উদ্দিন।
রাজশাহীর নওহাটা থেকে ১০০ কেজির ১০ বস্তা ঢেঁড়স নিয়ে এই আড়তে তুলেছিলেন আব্দুস সাত্তার। ৮ টাকার সঙ্গে খরচ আর আড়তদারের কমিশন যোগ করে কেজি প্রতি ১৩ টাকা পড়েছে।
কিন্তু কয়েলরা (যারা চিৎকার করে দাম বলে ক্রেতা টানেন) কেজি প্রতি ৮ টাকা, পাল্লা ৪০ টাকা দর হেঁকেও ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
মামুন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মামুন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি মালের চাহিদা কম হওয়ায় আজ বাজারে বিপর্যয় নেমেছে।
তিনি বলেন, এই মূল্য পতনের প্রভাব পড়বে কৃষক পর্যায়ে। কারণ, পূঁজি বা চালান হারিয়ে সেই পাইকার আগামীকাল মোকামে না গেলে বাজার প্রতিযোগিতা হারাবে। কৃষকও নায্যমূল্য পাবে না। আর কাঁচামালের প্রবাহ কমে গেলে সংকট তৈরি হবে। আমাদের মতো আড়তদারদের না খেয়ে মরতে হবে।