তালা প্রতিনিধি:
১৯৭১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরী থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে
জীবন জীবন বাজী রেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বাড়ী থেকে বের হলাম, সহযোদ্ধা
ফয়জুলাহ, আব্দুল মান্নান, মুজি গোলদার সহ নিরুদ্দেশ জীবনযাপনে কেটে যায়
কয়েক মাস। সহযোদ্ধাদের সংগঠিত করে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার রাঢ়–লী গ্রামের
আবুল কালাম আযাদের নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। খুলনা ও
কপিলমুনির যুদ্ধে সরাসরী অংশ গ্রহন করি। সেদিন চোখের সামনে পাকিস্থানী
হানাদার বাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধার মৃত্যু দেখেও পিছপা হয়নি। আহার নিদ্রাহীন
ফেরারী জীবনের ৯ মাসের আমাদের কষ্টার্জিত ফসল কাংঙ্খিত স্বাধীনতা নিয়েই
ঘরে ফিরি। আবারও চাকুরী জীবনে ফিরে যায়। জীবনযুদ্ধের কষাঘাতে কখন যে
বার্ধক্য পৌছেছি সেটাও খেয়াল করা হয়নি। একদিন আমার এক সহযোদ্ধার
মাধ্যমে জানতে পারলাম, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নামটি অর্ন্তভূক্ত হয়নি। শুনে
প্রথমে কিছুটা হতাশ হলাম, দুঃখও পেলাম, কিন্তু আতœতৃপ্তি এইযে, আমি তো
দেশের জন্য যুদ্ধকরেছি, তালিকার জন্য নয়, এটাই আমার গর্ব কথাগুলো বলছিলেন,
তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর গ্রামের মৃত তাজল জোয়াদ্দারের পুত্র
মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ জহর আলী জোয়াদ্দার (৭২)। তিনি এখন অবসর জীবনে,
স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। তিনি বলেন বুকটা
কেন জানি কেঁদে ওঠে যখন দেখি আমাদের মত অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের নাম
গেজেটে থাকে না, কিন্তু পাক-হানাদার বাহিনী সহায়তাকারী ঐ নওশের আলীরা
সনদ প্রাপ্ত হয়ে, গেজেটে নাম দেখিয়ে ……. মত দাঁত বের করে আমাদের সামনে
হাসে, সে হাসি হানাদার বাহিনীকেও হার মানায়। তখন কষ্টে বুকের মধ্যে হা-হা-
কার করে ওঠে ।
সরেজমিনে সরে জমিন খেশরা এলাকায় গেলে কথা হয়, একই এলাকার বীর
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ ফকির (৭৮), সুলতান মালী (৬৮), কওছার আলী সরদার (৬৬) সহ
কয়েকজন মুরুব্বীর সঙ্গে, তারা বলেন, জোহর আলী জোয়ার্দার একজন প্রকৃত
মুক্তিযুদ্ধা। এলাকাবাসী আরও জানায়, তালার ইসলামকাটী ইউনিয়নের কাজী
ডাঙ্গা গ্রামের শের আলীর পুত্র মুক্তিযোদ্ধা আঃ সবুর ইসলামকাটী সাবরেজিষ্ট্রি
অফিসের দলিল লেখক থাকা অবস্থায় থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পান। এ
সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারই সহকর্মী দলিল লেখক নওশের আলী জোয়াদ্দাÍ যুদ্ধে
অংশ না নিয়েও তার সহযোগীতায় তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করিয়েছে। এমন অনেক
অমুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় এসেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক
মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেন।
বিষয়টি নিয়ে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মাষ্টার আলাউদ্দিন
জোয়ারদার জানান, আমাদের উপজেলার ৪০/৪৫ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা
থেকে বাদ পড়ে গেছে। তবে আমার জানামতে মোঃ জোহর আলী জোয়ার্দার
একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেননি এমন ব্যক্তির নাম
তালিকায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন ভুল ক্রমে বা স্বজনপ্রীতির
কারণে এমন অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এসেছে। তবে যদি আবার যাচাই
বাছাইয়ের সুযোগ আসে তাহলে ভুয়া গুলো বাদ দেওয়া হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা
কমান্ডার মোঃ মফিজ উদ্দিন জানান, প্রকৃত কিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম যেমন বাদ
পড়েছে, তেমনি কিছু অমুক্তিযোদ্ধার নামও তালিকায় এসেছে। তিনি আরও বলেন,
তালা উপজেলায় প্রকৃত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১৩০/১৪০
জন এর বেশী হবেনা, কিন্তু ভাতা পাচ্ছে ২৯৯ জন। তবে সঠিক যাচাই বাছাই করে
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্তী এবং ভুয়া নাম বাদদিয়ে গেজেট
প্রকাশের দাবী শুধু জহর আলীর নয়, এটা নতুন প্রজন্মের দাবি।